রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় এক ইমামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছে লন্ডনে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় মসজিদের একদল মুসল্লি।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম শেখ মোহাম্মদ মাহমুদ সম্প্রতি রিজেন্ট পার্ক মসজিদে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্মরণে আয়োজিত সভায় অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেন। সেই অনুষ্ঠানে শিশুরা যুক্তরাজ্যের জাতীয় সঙ্গীত 'গড সেভ দ্য কিং' পরিবেশন করে।
এই অনুষ্ঠানের খবর তখন বেশ ফলাও করেই ব্রিটেনের জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল।
কিন্তু এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে গত কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইমাম মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। তাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে চেঞ্জ ডট অর্গ ওয়েবসাইটে একটি পিটিশন করা হয়েছে যাতে এরই মধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষ সই করেছেন।
এই আবেদনে বলা হয়েছে, 'যিনি ঔপনিবেশিক পদক গ্রহণ করেন এবং আপনার সন্তানদের দিয়ে 'গড সেভ দ্য কিং' গান করান, তার কাছ থেকে কি আশা করেন? এসব ইমামের কাছে আপনার সন্তানদের কেন পাঠাবেন?'
উল্লেখ্য, ইমাম শেখ মোহাম্মদ মাহমুদ ব্রিটেনের সম্মানসূচক পদক 'অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার' (ওবিই) পেয়েছেন।
শনিবার (৮ অক্টোবর) ইস্ট লন্ডন মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর একদল মুসল্লি ইমাম মাহমুদকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এই বিক্ষোভের ভিডিও কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং ফেসবুকে শেয়ার করেছেন অনেকে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজিত মুসল্লিরা মসজিদের বড় হলঘরের সামনে জড়ো হয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছেন, আর মসজিদের কর্মকর্তারা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
ইমাম মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, 'তিনি শুধু আল্লাহর ঘরের অপব্যবহার করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি শিশুদের বিপথে চালনা করেছেন। আমাদের পিতা-মাতার প্রজন্ম মসজিদ বানিয়েছেন তাদের সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা দেয়ার জন্য, 'পশ্চিমাকরণ' থেকে বাঁচাতে, কিন্তু এসব ইমামদের দেখে মনে হয় তারা যেন মুসলিম শিশুদের পশ্চিমা ধাঁচে গড়তে চায়।'
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমাম মাহমুদের ভূমিকার প্রশংসা করে তার পক্ষেও সোচ্চার হয়েছেন অনেকে।
চেঞ্জ ডট অর্গে তার পক্ষেও একটি পিটিশন খোলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইমাম মাহমুদ সম্পর্কে অনেক ভুয়া খবর এবং মিথ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিবিসি বাংলা ইমাম শেখ মোহাম্মদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে তিনি বলেন, যে ঘটনা নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই অনুষ্ঠানে তিনি একজন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছেন মাত্র। আর অনুষ্ঠানটি হয়েছে রিজেন্ট পার্ক মসজিদে।
আরও পড়ুন: ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আটক আট
এদিকে, ইস্ট লন্ডন মসজিদের জেনারেল বোর্ডের একজন সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ জানিয়েছেন, ইমাম শেখ মোহাম্মদ মাহমুদকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভের কথা তিনি শুনেছেন, তবে তিনি সেসময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
তিনি বলেন, মসজিদে যারা আসেন, তাদের মধ্যে অনেকের অনেক বিষয়ে ভিন্নমত আছে। একটি কমিউনিটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মসজিদ সবাইকে তাদের মত প্রকাশ করার সুযোগ দেয় বলে তিনি জানান।
একাত্তর/এসজে