ঈদের পর ভেঙে ফেলা হচ্ছে কারওয়ান বাজার কাঁচা পণ্যের আড়ত। এ নিয়ে শঙ্কায় আড়তদাররা। বাকিতে চলা এই ব্যবসায় লগ্নি করা টাকা তোলা নিয়েই এখন তাদের চিন্তা বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সেই সাথে সিটি কর্পোরেশনের গাবতলীর বাজার কাঁচা পণ্যের ব্যবসার জন্য উপযোগী নয় বলেও দাবি তাদের।
মৌসুমের কৃষিপণ্য হাতে পেতে কৃষকদের সার বীজসহ অন্যান্য উপকরণ বাবদ অগ্রিম অর্থ লগ্নি করতে হয় কারওয়ান বাজারের আড়তদারদের। এখানে বিক্রিও চলে বাকিতে। শুধু কাঁচা পণ্যের এই বাজারের বিনিয়োগ আছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
ঈদের পর কারওয়ান বাজারের এই আড়ত ভেঙ্গে ফেলা হলে সেই টাকা কিভাবে ফেরত পাবেন তা নিয়ে শঙ্কায় ছোট-বড় আড়তদাররা।
এক কাঁচামালের আড়তদার জানালেন, তার নিজেরই বাকি-বকেয়া দিয়ে প্রায় এক-দেড় কোটি টাকার মতো আটকে রয়েছে। এক ছোট ব্যাপারী জানালেন, তার ছোট ব্যবসায়ই বাকি-বকেয়ার পরিমাণ প্রায় সাড়ে চার লাখ। পাইকারের কাছে, ব্যাপারীর কাছে এসব বাকি-বকেয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
কারওয়ান বাজার থেকে সারা দেশে গড়ে ওঠা সাপ্লাই চেইনে যুক্ত লাখো মানুষের জীবিকা। পণ্য ওঠা-নামা থেকে শুরু করে কুলি-মজুর, শ্রমিক, এমনকি ফেলে দেওয়া সবজির বিক্রেতারাও আছেন আওতায়। ফলে বেকার হবার শঙ্কা তাদেরও।
বাজারের এক ছোট সবজি বিক্রেতা জানালেন, তিনি থাকেন আশপাশের এলাকায়। এ এলাকার আশপাশের বহু মানুষ এখানে আসেন একটু অল্প দামে বাজার করতে। বাজার সরে গেলে তিনি তার এ জীবিকা হারাবেন। আরেক নারী বিক্রেতা জানালেন, বাজার অন্য জায়গায় গেলে তো তার আর এরকম বেচাকেনা হবে না। কি খাবেন তখন, কি করবেন- এই নিয়েই এখন শঙ্কা তার।
বলা হচ্ছে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা জায়গা পাবেন গাবতলীর কাঁচাবাজারে। সেই বাজার আড়তয়ের জন্য উপযোগী নয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
গাবতলীর কাঁচাবাজারে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে শাটার দেয়া ছোটছোট দোকান ঘর। আশেপাশে খোলা জায়গা থাকলেও একটি মাত্র প্রবেশপথ। এই পথে প্রতিদিন তিন থেকে চারশো ট্রাকের ঢোকা বা বের হবার উপায় নেই।
আড়ত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সুজন জানালেন, সিটি কর্পোরেশন বারবারই বলছে দোকান। কিন্তু কারওয়ান বাজারে কোনো দোকান নেই। এগুলো আড়ত। ওখানকার যে দোকানের ব্যবস্থা, তাতে লোড-আনলোডের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যানজট তৈরি হবে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছবে না। ফলে আশঙ্কা রয়েছে পণ্য পঁচে যাওয়ার।
তবে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম জানালেন, যেগুলো প্রয়োজন তার সম্ভব সবটুকুই করে দেবে সিটি কর্পোরেশন। প্রয়োজনে নতুন রাস্তা তৈরি করা হবে।
ঈদের পরই কারওয়ান বাজারের সবজির আড়ত ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু হবে। একে একে অন্য আড়তগুলোও সরিয়ে নেয়ার কথা রয়েছে।