দু’সপ্তাহ পার হলেও এখনও জানা যায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তারের মৃত্যুর কারণ। তবে সাদিয়ার পরিবারের দাবি, দশ লাখ টাকা যৌতুকের জন্যই তাদের মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দুই বছরে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন সাদিয়া। পরে, পরিবারের চাপে বিয়ের পর বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া।
সব প্রণয় কি সুখের হয়? বিয়ের ভিডিও আর ছবি দেখে হয়তো সুখের অনুমান করা যায় কিন্তু দুই বছরেই শেষটা হলো করুণ পরিণতিতে। পরিবারের সিদ্ধান্তে ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল দেড় বছর আগে।
যখন বিয়ে হয় তখন সাদিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনটি সেমিস্টারেই সে ছিল প্রথম এবং শেষ সেমিস্টারে সিজিপি ৪ এর মধ্যে সে ৪ পেয়েছিলো। তার শিক্ষকরা ও সহপাঠীরা বলছেন, এমন মেধাবী শিক্ষার্থী তারা খুব কম দেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার বাসিন্দা সাদিয়ার বাবা জানায়, অবসরে চলে যাবেন, সেই ভাবনায় পড়াশোনা শেষের আগেই বোনের ছেলের সাথে পরিবারিকভাবে বিয়ে দেন সাদিয়াকে। পড়াশোনার চেয়ে মেয়ের বিয়ে দেয়াটাকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
সাদিয়ার বাবা মো. ফায়েজ ভুঁইয়ার দাবি, বিয়ের পর যৌতুকের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল এজন্য মেয়েকে প্রায়ই মারধর করা হতো।
সাদিয়ার মা মিনারা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
সাদিয়ার মৃত্যুর খবর প্রথম দেয়া হয় তার ভাইকে। বলা হয় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্বজনরা আজিজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখেন রুমের আসবাবপত্র ভাঙা। মরদেহ বিছানায় শোয়ানো। আত্মহত্যা করলে গলায় দাগসহ যেসব আলামত থাকার কথা তার কিছুই নেই। পুলিশকে হত্যা মামলা নিতে বলা হলেও পুলিশ নিয়েছে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা।
সাদিয়ার ভাই মো. ফরহাদ ভুঁইয়া জানান, ওসি তাদের কথা না শুনেই আত্মহত্যার মামলা নেয়।
ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে এই মামলার ভবিষ্যৎ। পরিবারের অভিযোগ সেই রিপোর্ট পাল্টে দেয়ার জন্য টাকার বিনিময়ে কলকাঠি নাড়ছে এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা।
আজিজুলের বাড়িতে এখন কেউ নেই। প্রতিবেশীরা জানায়, সাদিয়ার মৃত্যুর পরও বেশ কিছুদিন সবাই বাড়িতে ছিলো।
আড়াইহাজার থানার এসআই সাদ্দাম হোসেন জানান, তারা আসামি খুঁজে পাচ্ছেন না। সবাই পলাতক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাদিয়ার সহপাঠীরা জানায়, ব্যাচের প্রথম স্থান দখল করা শিক্ষার্থী ছিলো সাদিয়া। যে শিক্ষার্থীর অমিত সম্ভাবনা ছিলো তার এমন করুন পরিণতি মেনে নিতে পারছে না কেউ।