সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে দশজন মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনও জলদস্যুদের হাতে একটি ট্রলারসহ জিম্মি রয়েছেন পাঁচ জেলে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন তৎপরতা না থাকায় দুবলার জেলেপল্লীতে বিরাজ করছে হতাশা ও জলদস্যু আতঙ্ক।
দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি রাতে মান্দারবাড়ীয়ার কাছে বঙ্গোপসাগর থেকে অপহৃত দুবলারচরের ১৫ জেলের দশ জেলে জনপ্রতি দুই লাখ আশি হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৩/৪ দিন আগে বাড়ি ফিরতে পারলেও এখনও জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছেন একটি ট্রলারসহ পাঁচ জেলে। জিম্মি জেলেরা হলেন- শাহজাহান, রিপন, সুজন বিশ্বাস, মতিয়ার। অপরজনের নাম জানা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, হতদরিদ্র জেলেরা জমি বন্ধক রেখে ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। টাকা জোগাড় করতে না পারায় জলদস্যুদের কবল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না পাঁচ জেলে। জিম্মি জেলেদের মুক্ত করার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোন তৎপরতা না থাকায় দুবলারচরের কয়েক হাজার শুটঁকিকরণ জেলের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা ও আতঙ্ক। জেলেরা এখন সাগরে মাছ ধরতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।
সাগরে ২/৩ টি জলদস্যু গ্রুপের আনাগোনা রয়েছে জানিয়ে দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি আরও বলেন, দুবলারচরে কোস্ট গার্ড ও র্যাবের দুইটি ঘাটি নির্মাণ করা হলেও তাদের নেই সাগরে চলাচল উপযোগী দ্রুতগামী নৌযানসহ প্রয়োজনীয় জনবল ও সামগ্রী।
শ্যামনগরের বন্যতলা গ্রামের মৎস্যজীবী আবু তালেব হোসেন জানান, জনপ্রতি দুই লাখ আশি হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তার ছেলে শাহ আলম ও তার ট্রলারের মাঝি আজহারুলকে জলদস্যুদের কবল থেকে তিনি মুক্ত করে এনেছেন। কয়েকটি ছাগল, একটি মোটর সাইকেল বিক্রি করে এবং চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তিনি জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করেছেন।
আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের জেলে জিম্মি শাহজাহানের স্ত্রী নাজমা বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, তার স্বামীর মুক্তির জন্য দস্যুদের তিন লাখ টাকা দেওয়া হলেও এখনও তাকে ছেড়ে দেয়নি বলে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
দুবলার আলোরকোলের রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিন ফরাজী বলেন, জলদস্যুদের ভয়ে জেলেরা সাগরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। অচিরে পূর্বের মতো দস্যু দমন করতে না পারলে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হবেন বলে মোতাসিন ফরাজী জানান।
এদিকে, ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত শরণখোলা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহ বলেন, জেলে জিম্মির ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি তবে ২৬ জানুয়ারি দুবলারচরে অস্ত্রসহ আটক তিন জলদস্যুর বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।