আগুনমুখা নদী ঘেঁষা চর কাউখালী। তার চার পাশে নদী আর খাল। কিন্তু নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি। সুপেয় পানির জন্য রীতিমত হাহাকার চলে সেখানে। চরের বাসিন্দাদের সুপেয় পানি পেতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। পাশের উপজেলা থেকে নদী পেড়িয়ে ট্রলারযোগে আসে সেই পানি। এজন্য গুণতে হয় অতিরিক্ত টাকাও। তবে সবসময় সেই পানি জোটেও না। তখন আর উপায় না পেয়ে নদী কিংবা খালের পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে খেতে হয় কাউখালীর বাসিন্দাদের।
চরটির অবস্থান পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের চাঁন বাজার থেকে সেতু পেড়িয়ে উত্তর দিকে এগুলো দেখা যাবে বসতি আছে প্রায় একশ। কিন্তু নলকূপ আছে মাত্র দুই-তিনটি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদী ও খাল তীরবর্তী অর্ধশত বাড়ি থেকে সেই নলকূপের দূরত্ব প্রায় তিন-চার কিলোমিটার। ছোট ছোট খাল-নালা ও আকা-বাঁকা পথ পেড়িয়ে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করাও অনেক কষ্টসাধ্য।
একারণে আগুনমুখা নদী পেড়িয়ে পাশের গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি কিংবা চরফ্যাশন উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে ট্রলারযোগে গভীর নলকূপের সুপেয় পানি আনতে হয় এ চরে। ট্রলারের তেল পুড়ে পানি আনতে খরচও কম নয়। কিন্তু নদী উত্তাল থাকলে তাও জোটে না সবসময়। তখন চরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা আগুনমুখা নদী কিংবা কাউখালী খালের পানিই একমাত্র ভরসা। সেই পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে খেতে হয় বাসিন্দাদের।
সরেজমিন চরটি ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ না থাকায় এবং নদী তীরবর্তী হওয়ায় চরটির পুকুরগুলোতেও লবণাক্ততা ছড়িয়ে গেছে। ফলে সে পানি পান করা যায় না। তাই ড্রামে পানি সংগ্রহ করে ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে চলে রান্নাবান্না এবং গৃহস্থালি কাজ। আর খাবার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আনা নলকূপের পানি সংরক্ষণ করা হয় কলস, পট এবং বোতলে। পানি ফুড়িয়ে গেলে আর কী করার, তখন জীবন বাঁচাতে নদী-খালের পানিই ভরসা।
চরের গৃহবধূ পারভীন বেগম বলে, আমরা পানির জন্য অনেক কষ্ট করি। কল অনেক দূরে। তাই বেশিরভাগ সময় খালের পানি দিয়ে এইভাবে রান্না করি এবং ফিটিকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করি।
চরের বাসিন্দা কৃষক শহিদুল সরদার বলেন, বাড়ির পাশের খাল থেকে কলসে করে পানি আনি। এখানে কোন নলকূপ নেই। আমরা পানপট্টি আর চরফ্যাশন থেকে ট্রলারে করে ড্রাম, কলস, পট ভরে পানি আনি। এইজন্য ট্রলার ভাড়া দেই। প্রত্যেকবার এক থেকে দেড়শ’ টাকা ভাড়া দেওয়া লাগে। যখন পানি পাই না, তহন এইভাবে খাল থেকে পানি নেই। সেই পানিতে ফিটকিরি দিয়ে খাই।
তিনি বলেন, বর্ষায় কলের পানিটা কম আনতে পারি। কখন বৃষ্টির পানি ড্রাম ভরে রাখি। ওইয়া দিয়াই রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়া চলে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে প্রতি অর্থবছরে এ উপজেলায় ১৩০টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঘন ঘন নলকূপ স্থাপন হলেও এতদিনেও কাউখালী চরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গভীর নলকূপ স্থাপন হলো না কেন, এমন প্রশ্ন চরের বাসিন্দাদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সাথী বেগম বলেন, কাউখালী চরের বিষয়টি আমরা জানলাম। ওখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
চরের বাসিন্দাদের নলকূপের দাবিতেআশ্বস্ত করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, চরটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদরের বাগান পাড়ায় তীব্র পানির সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে ২২টি পরিবার। শুধু তাদেরই নয়, প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে এসব এলাকায় বসবাসকারীদের চরম দুভোর্গে দিন কাটাতে হয়, পানির অভাবে।
জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বরাদ্দ কম হওয়ায় পানির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। নলকূপের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও বিকল্প উৎসের দিকে নজর দেয়ার কথা বললেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির জেলা শহরের কাছেই গোলাবাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রাম মহালছড়া বাগান পাড়া। খাড়া পাহাড়ের ওপর এই পাড়ায় বাস করে ২২টি পরিবার। এলাকায় পানির উৎস বলতে ছোট কুয়া ও ঝরনা। শুষ্ক মৌসুম এলেই এসব প্রাকৃতিক উৎস শুকিয়ে যায়।
এদিকে পাড়ায় বসবাসকারীদের জন্য একটি নলকূপও নেই। ছড়া-খালের দূষিত পানি খেয়ে অনেকেই পেটের অসুখে ভোগেন।
খাগড়াছড়ির গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উল্লাস ত্রিপুরা জানান, নলকূপ স্থাপনে পাথুরে মাটিও বড় বাধা। নলকূপের বরাদ্দ যা আসে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
পানি নিয়ে একই হাহাকার পাশের ঠাকুরছড়া, নুনছড়ির মঙ্গারাম পাড়া, ১ নম্বর রাবার বাগান ও বড় পাড়াতেও। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শানে আলম জানালেন বর্ষাকালীন পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা।
পাহাড়ে পানির সঙ্কট নতুন নয়। কিন্তু অবাধে বন জঙ্গল উজার হওয়ায় সমস্যা আরো বেড়েছে। নলকূপের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মতো বিকল্প ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।