নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় শতবর্ষী একটি বট গাছের নিচে সিদ্ধেশ্বরী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এই পূজাকে কেন্দ্র করে তিন দিন ব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে মেলার। স্থানীয়ভাবে মেলাটি বউমেলা হিসেবে পরিচিত। এই আনন্দ আয়োজন এক সুতোয় বেঁধেছে আশপাশের সব সম্প্রদায়ের মানুষকে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে এই পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আয়োজকরা জানান, এই বটগাছকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী রূপে পূজার প্রচলন প্রায় একশ বছর আগে। পরে বংশ পরম্পরায় এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শুরুর দিকে শুধু গৃহবধূদের নিয়ে এই আয়োজন হলেও পরে তাতে বিভিন্ন বয়সের নারীরা অংশ নেন। শতবর্ষী ওই বট গাছটিকে স্থানীয় সনাতন ধর্মের মানুষ সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। এ গাছটি সিদ্ধেশ্বরী কালীতলা নামে পরিচিত। কিন্তু এলাকায় এটাকে বলা হয় বউতলা। পুরুষরাও এই মেলায় যান, তবে সংখ্যায় কম।
পূজা দিতে আসা শীলা রানী জানান, ছোট বেলা থেকে এখানে পূজা দিয়ে আসছি। আমরা সিদ্ধেশ্বরী কালী দেবী হিসেবে এ গাছে পূজা দিই। প্রথা অনুযায়ী এ গাছের গোড়ায় বিভিন্ন বয়সী নারী মাটি দিয়ে থাকেন। মাটির সঙ্গে একটি করে কড়ি দিতে হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস, এতে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্য যতো জন, ততোবার মাটি দিতে হয়।
মেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানান, প্রতি বছর এখানে পরিবারের মঙ্গল কামনায় পূজা-অর্চনা করে আসছেন। এটি বেশ পুরনো রীতি। মূল পূজা দুপুরে হলেও ভোর থেকেই এখানে পরিবারের বধূরা স্নান করে শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাকে তেল-পান দিয়ে পরিবারের সবার জন্য মঙ্গল কামনা করে।
আয়োজক নিলুৎপল রায় বলেন, শুরুর দিকে এখানে পুরুষরা আসতো না, এই পূজা শুধুমাত্র নারীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হতো। তারা মেলায় আসতেন, তবে তারা পূজায় অংশ নিতেন না। তাই তখন থেকেই এই মেলা বউমেলা নামে পরিচিতি পায়। পঞ্জিকা অনুসারে নববর্ষের প্রথম দিনে দেশবাসীর মঙ্গল কামনায় এই পূজার আয়োজন করা হয়।
তিনি জানান, নতুন বছর যেন ভালো কাটে, সবাই যেন ভালো থাকতে পারে, শান্তিতে থাকতে পারে তাই এই পূজার আয়োজন। প্রায় একশ বছর ধরে এই পূজার আয়োজনে পুরো এলাকায় বৈশাখী উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।