প্রায় ২৮ ঘণ্টা পোড়ার পর পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ক্যাম্প এলাকার শাপলা বিল সংলগ্ন তেইশের সিলায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের চারটি টিম, সিপিজি ও ভিটিআরটি টিমের সদস্যরা প্রস্তুত থাকলেও পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা সময় বসে কাটাতে হয়েছে।
ধান সাগর এলাকার ভিটিআরটি টিম লিডার মো. লুৎফর রহমান জানান, সময় মতো পানি ছেটানো গেলে রোববার সন্ধ্যায় তেইশের ছিলার আগুন নেভানো সম্ভব হতো। বনসংলগ্ন ভোলা খালে পানি না থাকায় বাড়তি সময় পুড়তে হয়েছে সুন্দরবনকে। রোববার (২৩ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে ওই লাগে। কিন্তু তা জানাজানি হয় দুপুর একটার দিকে। দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুর একটার দিকে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজী এলাকার টেপার খালের বনাঞ্চলে লাগা আগুনের ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে শাপলার বিল এলাকায় তেইশের সিলায় রোববার সকালে আগুন লাগে। স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, দুপুর সোয়া দুইটায় সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ওই আগুন নেভাতে রওনা হয়েছিল আলাদা পাঁচটি টিম।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা দীপেন চন্দ্র দাস জানান, রাতে পানি ছিটিয়ে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। খালে পানি না থাকায় রাত একটার দিকে পানি ছেটানো বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার সকালে আবারও আগুন লাগা স্থানে পানি ছেটানো শুরু হয়। আগুন এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কোথাও কোথাও সুপ্ত আগুনের ধোঁয়া উড়ছে। যেখানেই ধোয়া দেখা যাচ্ছে সেখানেই পানি দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় উপ পরিচালক মো. আবুবকর জামান জানান, আগুন লাগা স্থানের পাশে ভোলা খালে সময় মতো পানি না পাওয়ায় আগুন নেভানো ব্যাহত হয়েছে। ওই খাল থেকে শুধু ভরা জোয়ারে পানি দেওয়া সম্ভব। তাই রাতে মাত্র তিন ঘণ্টা পানি ছেটানো সম্ভব হয়েছে। সকালে আবার জোয়ারে পানি ছিটানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগুন এখন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি সিপিজির স্থানীয় গ্রুপ লিডার মো. আবুল আসলাম তুহিন জানান, প্রতিবছর এভাবে বনে আগুন লাগলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। অধিক অগ্নিপ্রবন এলাকা ধানসাগরের খালগুলো গভীর করে কাটতে হবে যেন আগুন লাগলে দ্রুত পানি সরবরাহ করা যায়।
বনবিভাগের একটি সূত্র জানায়, ধানসাগর ক্যাম্পের কাছে তেইশের সিলায় রোববার সকাল ৯টার দিকে আগুন লাগে। বনবিভাগের ড্রোন প্রথমে এ আগুন দেখতে পায়। তখন কলমতেজীর টেপার বিলের আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে বনবিভাগ ছোটে নতুন করে লাগা আগুনের স্পটে। বনবিভাগ সেখানে ফায়ার লেন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে তেমন ফল হয়নি।
অপরদিকে ভোলা খালে পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিস টিম তাদের অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম নিয়ে সময় মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। স্থানীয়দের ধারণা, প্রায় ১০ একর বনে আগুন লাগে।
বনবিভাগ দুটি স্থানের আগুন লাগার কারণ উদঘাটনের জন্য চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক দিপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।