বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিযোগ্য বিপুল আম নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে চীন। ইতিমধ্যে আম রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তাদের দেশের সফল আলোচনাও হয়েছে। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে সই হয়েছে এমওইউ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া ঘাসুড়া এলাকার একটি আমবাগান পরিদর্শনে এসে এ তথ্য জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
এসময় তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলো দেখতে এসেছি। আমগুলো কতটা রপ্তানিযোগ্য তা যাচাই করতে এখানে চীনের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা এসেছি। বাংলাদেশের উৎপাদিত সুস্বাদু মিষ্টি, ফ্রেস আমের জন্য চায়নার বাজার খোলা। তাছাড়া অন্য দেশের চাইতে বাংলাদেশের আম চাষীদের চীনে আম রপ্তানিতে খরচও কম।
তিনি জানান, চীনের আগ্রহ থাকায় আম সংরক্ষণ ও সংরক্ষণাগার নির্মাণে চীন সহযোগিতা করবে। যেকোনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে দেশটির জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অব কাস্টম অব চায়না (জিএসিসি) থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। জিএসিসি গত বছরের জুলাইয়ে আম রপ্তানির নিবন্ধন দিয়েছে। এখন চীনের আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির বিভিন্ন পর্যায় যাচাই-বাছাই চলছে। হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট কেলিব্রেশন বা সঠিকতা, প্যাকেজিংসহ অনেক কিছুই যাচাই করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে চীন মে মাসের মধ্যভাগ থেকে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম নেবে।
এর আগে গত সপ্তাহে জেলার কয়েকটি আমবাগান এবং আম গ্রেডিং, শর্টিং ও শোধন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন চীন আমদানিকারকদের প্রতিনিধি। পরিদর্শন শেষে তারাও আম আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাগান মালিক ও উদ্যোক্তাদের আশা, আম রপ্তানি দেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেবে। আগামী জুন থেকেই আশা করা যায় চীনে আম রপ্তানি শুরু হতে পারে।
এদিকে রপ্তানিযোগ্য আমের বাগান ঘুরে দেখে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন মুগ্ধ হয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের এ উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন। তিনি আম্রপালি, বারি-৪ , কাটিমনসহ বিভিন্ন জাতের আমগাছ গুলো ঘুরে দেখেন। আমের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কেও খোঁজ খবর নেন। এসময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার স্ত্রীসহ কয়েকজন আমদানিকারক উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী, নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসার সলেহ্ আকরাম, নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা সরকার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া, থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রায়হানুল ইসলামসহ কৃষি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় কয়েকজন বাগান মালিক ও কৃষক তাদের বিভিন্ন জাতের আম সম্পর্কে ধারনা দেন ।সেই সঙ্গে চীনের আমদানি করা ফ্রুট ব্যাগগুলো দিয়ে আমগুলো মুড়িয়ে রাখার কারণ রাষ্ট্রদূত ও তার সফর সঙ্গীদের জানান।
বাগানমালিক কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্তত ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি হচ্ছে। তবে এ বছরই প্রথম চীনের বাজারে দেশের আম রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাগান থেকে পশ্চিমাদেশে ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য দেশে আম পরিবহনে প্রতি কেজিতে খরচ ৪৮০-৫২০ টাকা হলেও চীনে এ খরচ কেজিতে মাত্র ৮০/৯০ টাকা। এতে করে আমরা অনেক লাভবান হবো।
অপর চাষী মানিক বলেন, এটা উদ্যোক্তাদের জন্য খুশির খবর। কোনো তৃতীয়পক্ষ ছাড়া সরাসরি বাগান থেকে আম রপ্তানি হলে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।
এদিকে চীনের রাষ্ট্রদূতের আম কেনার আগ্রহে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সলেহ্ আকরাম বলেন, কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আম রপ্তানিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নাই। চায়না রাষ্ট্রদূত নাচোলের আম কিনতে সম্মতির কথা জানিয়েছেন।
তিনি রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মে মাসের শেষ দিক থেকে তারা আম নিতে চায়। তার আগে চায়নার কিছু কোম্পানির প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলো পরিদর্শন করবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে বোঝা যাবে চীনে কী পরিমাণ আম নেবে। পাশাপাশি জাহাজযোগে আম পরিবহনের মাধ্যমে পরিবহন খরচ কমাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে চীন সরকার কাজ করছে ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ধরণের বাধা-বিঘ্ন রয়েছে, সেগুলো দূর করে রপ্তানি বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ চলছে। চায়না এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন আম কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আম বাগান থেকে তিন লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আমের বাম্পার উৎপাদন ও রপ্তানিতে এ বছর রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মৌসুমে প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অন্যদিকে দেশ থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।