দেশের বিভিন্নস্থানে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত একটি বন্দর এবং একটি শুল্ক স্টেশনে করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত হওয়া দরকার। তবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত ভ্রমণকারীদের ও পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও এর সহকারীদের স্ক্রিনিং বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এজন্য সেখানে কাজ করছে একটি মেডিকেল টিম। কিন্তু সরকারি ভাণ্ডারে কিট মজুদ না থাকায় বন্ধ রয়েছে করোনা পরীক্ষা।
অবশ্য জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, কিট সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর অপর শুল্ক স্টেশন রহনপুর রেল শুল্ক স্টেশনে কোনো উদ্যোগই নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ওমিক্রনের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এলএফ.৭. এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১- এর সংক্রমণ বিভিন্ন দেশে দ্রুত হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টগুলো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজশাহীতেও করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে ভারতসহ আশপাশের কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ও বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে। একই সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া এসব দেশে ভ্রমণ না করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। যেসব বিদেশি যাত্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, তাদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, যদিও দেশে করোনা-ওমিক্রনের একটি উপধরণ এখন ছাড়িয়ে পড়ছে। এই উপকরণটিকে বলা হচ্ছে ‘জেএন-১’।
বিষয়টি মাথায় রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদের ইমিগ্রেশনে এক সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। এ টিমের সদস্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারত ভ্রমণকারীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছে। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিংবা জ্বর শনাক্ত হলেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে। তবে কিট সঙ্কটের কারণে করেনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওমিক্রন ভাইরাসের সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলো দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছেই।
ভারত ভ্রমণকারী শিবগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন বলেন, ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন করে সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ কারণে সোনামসজিদে করোনার টিম কাজ করলেও এ কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। ভারতে যাতায়াতকারী ব্যক্তিদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু কিট না থাকায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। যদি করোনা পরীক্ষা করা হয় তাহলে দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে না।
আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে অন্তত আড়াইশ ট্রাকে ৫০০ ভারতীয় প্রবেশ করছে। ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত চলছে। রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে বাংলাদেশি ট্রাকচালক ও এর সহকারীরা যাতায়াত করছে। অথচ তাপমাত্রা মাপা ছাড়া আর কোন পরীক্ষা করা হচ্ছে না। কাজেই কিটের সংকট কাটিয়ে করোনা পরীক্ষা জোরদার করতে হবে।
আমদানিকারক আলমগীর জুয়েলের ভাষ্য, বন্দরে কর্মরত প্রায় তিন হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। তাই সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। নয়তো ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন একাধিক ট্রেনে করে ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রেনে চালকসহ স্টাফরা বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও তাদের পরীক্ষা বা কোন মেডিক্যাল টিম কাজ করছে না। এতে করে এ এলাকার জনসাধারণও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। বিশেষ করে স্টেশন ঘেঁষে গড়ে ওঠা আমের বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা হওয়ায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রহনপুর স্টেশন মাস্টার মামুনুর রশিদ এ শুল্ক স্টেশনে কোন মেডিকেল টিম কাজ করছে না বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, দ্রুত সোনামসজিদ স্থলবন্দরের মত এখানেও মেডিক্যাল টিম দেয়া জরুরি।
রহনপুর শুল্ক স্টেশন সিএ্যান্ড এফ এজেন্ট মেহেদি হাসান চৌধুরী সজিব জানান, রহনপুর শুল্ক স্টেশন থেকে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব পায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত করোনা পরীক্ষায় মেডিকেল টিম দেওয়া হয়নি। এর আগে করোনার কঠিন সময়েও গণমাধ্যমে ব্যাপক লেখালিখির অনেক পরে মেডিকেল টিম দেয়া হয়েছিলো। যা রীতিমতো বৈষম্য।
রহনপুর আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনের ভাষ্য, স্টেশন ঘেঁষে জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম আমবাজার। পাশে ভারত থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনটি পণ্যবাহী ট্রেনে ট্রেনের স্টাফরা আসেন। অথচ কেন এখানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না,তা বোধগম্য নয়।
মেডিকেল টিম শুল্ক স্টেশনে কাজ না করা এবং কিট সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. একেএম শাহাব উদ্দীন বলেন, ঈদের পর থেকে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশনে একটি মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। তারা ভারত ভ্রমণকারীদের ও পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও তাদের সহকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। জ্বর থাকলে তাদের আলাদা করা হচ্ছে। কিন্তু করোনা পরীক্ষার কিটের মজুদ নেই। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিট পেলেই পরীক্ষা শুরু হবে।
রহনপুর শুল্ক স্টেশনে করোনা পরীক্ষায় এখনও কোনো মেডিকেল টিম কাজ না করার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। তবে করোনার এ উপধরণ সংক্রমণ রোধে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সকলকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।