ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খোলা থাকবে এবং আর প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, এভাবে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে যে, ও-লেভেল এ-লেভেল স্কুল খোলা থাকবে। ইংরেজি মাধ্যমে প্রভাবশালী ও ধনশালী ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করতে পাঠান। তাদের স্কুলগুলো খোলা থাকবে আর প্রান্তিক পর্যায়ে যাদের বাবা-মা মাঠে ঘাটে কাজ করেন এই বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজকে চালিয়ে রেখেছেন, তাদের সন্তানরা পাঠদান কার্যক্রম করতে পারবে না। এটা তো দৃশ্যত বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। সেটাই হচ্ছে দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, সবকিছু যদি রাজধানীকেন্দ্রিক, সবকিছু যদি প্রভাবশালীদের নেতৃত্ব হয়, তবে তো শিক্ষাক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করাটা আমাদের জন্য সম্ভব হবে না।
মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে সোমবার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট ।
আদালত আদেশে আরও বলেন, যেসব স্কুলে এসির ব্যবস্থা আছে, পরীক্ষা চলমান আছে, ও লেভেল, এ লেভেল পরীক্ষা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
আদালতের এ নির্দেশনার বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আদালতের আদেশের কপি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। এটা নিয়ে আমি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। পূর্ববর্তী নজির হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত একটি অন্তবর্তীকালীন আদেশ বহাল থাকে, নির্বাহী বিভাগ যদি সেটার বিষয়ে অবগত হয়, তারা সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সেটাই মেনে চলে। অর্থাৎ আদালতের যে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ সেটা যদি বহাল থাকে, আমরা যেহেতু নির্বাহী বিভাগ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমরা সেটা মেনে চলতে বাধ্য।
তিনি বলেন, তবে এ বিষয়ে আমাদের অবগত হতে হবে। আমরা এখনো অবগত হইনি। এখনো সময় আছে। আমরা সব সময় আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে চলি।
আদালতের আদেশ গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছেনে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সেই আদেশে কী বলা হয়েছে সেটা আমরা এখন পর্যন্ত জানি না।
আদালতে এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ছুটি, কারিকুলাম, টেক্সটবুক পরিচালনাগত নানা বিষয় যেটা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেটা একটা বিশেষায়িত কার্যক্রম। এই বিশেষায়িত কার্যক্রমে অনেক অংশীজন সম্পৃক্ত থাকে। অনেক স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছুটির বিষয়টিও ঠিক এমনই। আবহাওয়া অধিদপ্তর থাকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা থাকে।
তিনি বলেন, ঢাকার একটা পরিবেশ ঢাকার বাইরে যে বিভাগীয় শহরগুলো আছে সেখানে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে পরিবেশটা ভিন্ন। পাঠদান কার্যক্রমে যে অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট এবং সেখানে যারা শিক্ষক আছেন তাদের চ্যালেঞ্জগুলোও রাজধানীর মতো নয়। অনলাইনে ক্লাস রাজধানীতে যতটা করা সহজ, এখানকার বাবা আমাদের যে আর্থিক সামর্থ্য আছে, বাংলাদেশের সবার মধ্যে সেটা সমান নয়।
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, হাওরাঞ্চল, দ্বীপাঞ্চল এবং পার্বত্য অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পাঠদান কার্যক্রমটা হয়ে থাকে। সেগুলো যদি এখন বন্ধ থাকে সেগুলো তাদের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তাদের শিখন ফল অর্জনের যে ঘাটতি, সেটি আরও বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় তাপমাত্রার বিষয়টি বিবেচনের নিয়ে সুনির্দিষ্ট জেলায় পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিলো। সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্তও দিয়েছি। আমরা দৈনিক ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্তটা দিচ্ছিলাম। সোমবার কয়েকটি জেলায় দেয়া হয়েছিল, পরের দিন জেলার পরিসর বাড়ানো হয়।
সিলেটের অনেক জায়গায় তাপমাত্রা ৩০ এর নিচে এবং সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে বন্যা দেখা দিলে তো হাওড়া অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আর স্কুলে যেতে পারবে না। তাদের তো শুষ্ক মৌসুমে স্কুলে যেতে হবে। বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা ওই বিভাগগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ যে বিশেষায়িত প্রক্রিয়াটি কোন জায়গায় তাপমাত্রা বাড়বে কোন জায়গায় তাপমাত্রা কমবে। আমাদের নির্বাহী বিভাগের দৃষ্টিতে সেটি একটি পরিচালনাগত বিষয়। আমরা যদি এভাবে স্ব-প্রণোদিত নির্দেশনা পেয়ে থাকি, তবে সেটা পরিচালনাগত বিষয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এটাই হচ্ছে আমাদের অবস্থান।
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং যেহেতু আমরা রায়ের কপি পাইনি তাই, এ বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করবো না। এখানে নিরবতা হচ্ছে সম্মানের লক্ষণ।
প্রয়োজনে শুক্রবার স্কুল খোলা
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের এখন মোট কার্যদিবস আছে ১৮৫ দিন। সেখানে আমাদের মূল্যায়নের জন্য ২০ দিন রাখা হয়েছে। জাতীয় দিবস গুলোর জন্য পাঁচ দিন, অতিরিক্ত যে দিনগুলো আছে সেখানে আমরা রিঅ্যাডজাস্টমেন্ট করবো। শিক্ষা ক্যালেন্ডারটা স্থির থাকা কঠিন।
গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল হচ্ছে কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অগ্রিম বলা যাচ্ছে না। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের যতদিন প্রয়োজন সেটা অর্জন করার জন্য যদি শুক্রবার খোলা রাখতে হয় আমাকে খোলা রাখতে হবে। কারিকুলামের দিনগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের শনিবার খোলা রাখতে হচ্ছে। যদি দিবসগুলো সম্পন্ন হয়ে যায়, সেটা আমাদের খোলা রাখার প্রয়োজন হবে না।
অনেক জায়গায় তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খোলা রাখা হয়েছে-এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম বেশ কিছু জায়গায় এ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু সেটা তারা মানছেন না। কোন কোন প্রতিষ্ঠান সেটা মানছেন না, আমরা সেটা দেখবো। নির্দেশনা দেয়ার পরও যারা বিদ্যালয় খোলা রেখেছে, যে সমস্ত জেলায় তাপমাত্রা অত্যধিক সেসমস্ত বিদ্যালয়গুলোতে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।