রহস্য ভরা পৃথিবীতে এখনও অনেক কিছুই রয়েছে যা আমাদের অবাক করে দেয়। এমন অনেক রহস্যও আছে যা উন্মোচন করা এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি মানুষের পক্ষে। এরকমই এক রহস্যের নাম হল ডেড সি বা মৃত সাগর। জর্ডানে অবস্থিত এই জলাশয়কে সাগর বলা হলেও এটি মূলত লেক বা হ্রদ।
নামে সমুদ্র হলেও এটি আসলে একটি হ্রদ। ইসরাইল ও জর্ডানের সিমান্তে অবস্থিত এই হ্রদের নাম ডেড সি বা মৃত সাগর। যেখানে ইচ্ছে হলেই আপনি ভেসে থাকতে পারবেন। চাইলেও ডুবতে পারবেন না।
কোনো জাদু-টোনা নয়, এর পেছনে আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। জরিপে দেখা গেছে, মৃত সাগরের পানিতে রয়েছে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন টন লবন, যা সাগরজলের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি লোনা।
এর ফলে প্লবতার কারণে কর্কের মতো পানিতে ভেসে থাকে মানুষের দেহ। এই হ্রদের পানির এক মাত্র উৎস জর্ডান নদী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২৩ মিটার নিচে অবস্থিত এই হ্রদকে বলা হয় পৃথিবীর সর্বনিম্ন বিন্দু।
অতিরিক্ত লবনাক্ততার ফলে এই হ্রদের বুকে ব্যাকটেরিয়া ছাড়া কোন জীব বেঁচে থাকতে পারে না। তাই এখানে কোন মাছ নেই। তাছাড়া মৃত সাগরের লবনাক্ত পানি বিভিন্ন চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর ফলে অনেক আরোগ্য প্রত্যাশীদের ভিড় জমে হ্রদের জলাভূমিতে ।
বৈজ্ঞানিক ব্যখার বাইরেও এই হ্রদ তৈরীর পেছনে রয়েছে অনেক ধর্মীয় মত। কোরআন এবং বাইবেলের বর্ণনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই হ্রদ। ১৯৪৭ সালে এই হ্রদের তীরবর্তী গুহা থেকে আবিস্কৃত হয় ঐতিহাসিক পান্ডুলিপি 'ডেড সি স্ক্রল'।
বিভিন্ন ধর্মীয় নথি সম্বলিত এই পান্ডুলিপি খ্রিষ্টধর্মের সূচনাকালের স্পষ্ট দলিল হিসেবে চিহ্নিত। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয় এই হ্রদ।
তবে আশঙ্কাজনক হারে প্রতিবছর হ্রদের পানি হ্রাস পাচ্ছে। কলকারখানায় ব্যবহারের জন্য জর্ডান নদী থেকে পানি নেয়া হচ্ছে। ফলে গত শতাব্দীর তুলনায় এর বর্তমান দৈর্ঘ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই কারনে মৃত সাগর রক্ষায় ২০১৫ সালে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ।