রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ হলে, সব দলই নিবন্ধন পাবে এমন কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, কে জামাতপন্থি বা কে অন্যপন্থি সেটি দেখার কোন সুযোগ নেই বলে। তবে দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার আগে তাদের সব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন এই নির্বাচন কমিশনার।
রোববার সকালে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে নিবন্ধনের আবেদন জমা দেয়ার শেষ দিনে তিনি এসব কথা জানান। ইসি আলমগীর বলেন, নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলগুলোকে শতভাগ শর্ত পূরণ করতে হবে। এই নিয়ে কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে গেল কয়েকদিন নানা নামে নিবন্ধনের তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে নাম সর্বস্ব বিভিন্ন দল। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়ত বা জামায়াত শিবিরের আদর্শে বিশ্বাসী নেতাদের নানা নামে দল নিবন্ধনের আবেদন করার বিষয়টিও নজরে আসে কমিশনের।
জামায়াতের নেতারা বিভিন্ন নামে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে- বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমরা তো দেখিনি। আপনারাই (গণমাধ্যম) বলছেন। তবে যে কোনো দলের ক্ষেত্রেই নিবন্ধন পেতে শতভাগ শর্ত পূরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, কোন দলের একটি শর্তও যদি অপূর্ণ থাকে নিবন্ধন দেয়া হবে না। আজ (রোববার) শেষ দিন, এরপর কমিটি হবে। তারা যাচাই বাছাই করবে। তারপর আমরা দেখে সিদ্ধান্ত দেবো। শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে এক শতাংশ কম থাকলেও নিবন্ধন পাবে না। সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।
এই সাবেক ইসি সচিব বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী মে মাসে আমরা নিবন্ধন দেওয়ার কাজ শেষ করব। মে মাসের শেষে যারা পাওয়ার পাবে, আর না পেলে জানিয়ে দেব যে, কী কারণে নিবন্ধন পাবেন না। সব কাগজ তো যাচাই করতে হবে না। আইনের বলা আছে রেনডম করার জন্য। এছাড়া আমরা টিম করে দেব। কিছু জিনিস মাঠে দেখতে হবে, কিছু জিনিস এখানে।
আইনে প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য আবেদন আহ্বানের বিধান আছে। সে অনুযায়ী গত ২৬ মে দলগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট দেয় ইসি। পরে অনেকের আবেদনের ভিত্তিতে আরও দুই মাস সময় বাড়ায় ইসি।
সবশেষ দল নিবন্ধনের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলো ইসি। সময় দেয়া হয়েছিলো ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল ৭৬টি দল। কেএম নূরুল হুদা কমিশন নানা কারণে সবার আবেদন বাতিল করেছিল। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
তার পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করেছিলো। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট-, এই দু'টি দলকে নিবন্ধন দেয়।
১/১১ সরকারের সময় ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়। সে সময় ১১৭টি দল আবেদন করেছিল।
যাচাই-বাছাইয়ে পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। সবমিলিয়ে গত ১৪ বছরে মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিলও করা হয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি।
বর্তমানে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), গণতন্ত্রী পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাকের পার্টি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ফল শিগগিরই, ডিসেম্বরে যোগদান
এ পর্যন্ত যে পাঁচ দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, সেগুলো হলো-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ফ্রিডম পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত অন্তত ৩৫টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ইসিতে। এরমধ্যে বাহারি নামের দলও রয়েছে।
একাত্তর/এসি