বৈশাখের শুরুতেই তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশ। আরো দুদিন এই অবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আজ রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।
কয়েক দিনের টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ নগরজীবন। গরমে হাসফাস অবস্থা মানুষের। দক্ষিণের বায়ুপ্রবাহ না থাকায় তাপ প্রবাহের স্থায়ীত্ব বেশি হচ্ছে। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে- এর আগে দেশজুড়ে এমন তীব্র তাপ প্রবাহ কখনও দেখা যায়নি। যাকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এই গরমে রোগবালাই থেকে রেহাই পেতে বেশী করে তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বৈশাখেও দেখা নেই কাল বৈশাখীর। বৈশাখের আকাশ এখনও যেনো চৈত্রের দাবদাহের দখলে। সূর্যের প্রখর রোদে পুড়ছে সারাদেশ। তীব্র তাপদাহে দুর্বিসহ জনজীবন। জীবিকার তাগিদে প্রখর রোদেও পথে নামতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। রোদে পুড়ে রিকশা চালাতে হাঁপিয়ে উঠছেন চালকরা। ঘাম ঝরা শরীর নিয়ে গাছ তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। তারা বলছেন, রোদের তাপে শরীর ঝলসে যাওয়ার অবস্থা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগে তাপদাহ থাকতো এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু ২০১০ সাল পর থেকে তা আগস্ট পর্যন্ত বিরাজ করছে। প্রকৃতির নিয়ম মতো বৈশাখে দক্ষিণের বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কথা। কিন্তু সেই বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে পূর্ব-পশ্চিশ দিক থেকে। যা মূলত শীতকালে প্রবাহিত হয়। এর আগে আবহাওয়ার এমন পাগলাটে আচরণ দেখা যায়নি। যাকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলছেন এই আবহাওয়াবিদ।
সারাদেশে এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে আরও দুদিন। ২০ তারিখ পর থেকে কমে আসবে তাপমাত্রা। তবে ঈদের আগে টানা বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই বলছে আবহাওয়া অফিস।
তীব্র গরম থেকে রেহাই পেতে ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ চিকিৎসকদের। রোগবালাই থেকে বাঁচতে প্রচুর পানি, স্যালাইন এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়ারও তাগিদ চিকিৎসকদের।
এদিকে তীব্র গরমে নগরের মানুষ ও প্রকৃতিকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি ছিটিয়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
রোদের তাপ বাড়ার সাথে সাথে কষ্ট বেড়েছে খেটে-খাওয়া মানুষের। আবহাওয়া অফিস বলছে, সিলেটে অল্প বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাবনা
পাবনায় স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত তাপ অনুভব করায় স্বস্তি নেই কোথাও। তাপদাহের কারনে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড গরমের কারনে হাসপাতাল গুলোতে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ঠান্ডf-গরম জনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকের চাইতে তিনগুন রোগী ভর্তি রয়েছে।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। আর এ গরমে ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর চাপ। চিকিৎসকরা গরমে বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।বরিশাল
গরমে বরিশালেও বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রভাব। প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ জন রোগি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় টানা ১৭ দিন ধরে চলছে তাপদাহ। ফলে জেলার হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে রোগীর ভিড়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন, রাতের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবার কারণে সকালের দিকে বিভিন্ন অঞ্চলে কুয়াশার মত অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও জানান তারা।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পাবনার ইশ্বরদীতে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে অতিরিক্ত গরমে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ। চিকিৎসকরা এই সময় বাইরের খাবার না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
একাত্তর/এআর