চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি, যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরিরা আর বিদেশিদের চক্রান্ত এখন আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতো বেশি বাধা আসে ততো বেশি জোস আসে। নির্বাচন নিয়ে অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ছিলো। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে নির্বাচন করেছি। মানুষ ভোট দিয়ে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে এসেছেন, বিশেষ করে নারীরা।
শনিবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্রুত মন্ত্রিসভার বৈঠক বসবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার যত দ্রুত কাজ করবে, বিএনপির অন্তরজ্বালা তত বাড়বে।
সরকারপ্রধান বলেন, একটি মুসলিম দেশে পাঁচ বার নারী প্রধানমন্ত্রী, এটা অনেকেরই পছন্দ নয়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণেও চক্রান্ত আছে। বাংলাদেশে বসে অন্য দেশের ওপর হামলা করবে সেটা হতে দেওয়া হবে না। অনুগত কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আমাকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায়নি। কিন্তু মানুষ উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
‘তরিঘরি সরকার গঠন করা হয়েছে’ এমন গুঞ্জনের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরঘরি করার কিছু নাই। সরকারে গেলে কী করবো, আর বিরোধী দলে গেলে কী করবো তার সবকিছুই চূড়ান্ত করা ছিলো। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা একদিনও সময় নষ্ট করতে চাই না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচন করবে না এটা আমরা জানি। কারণ, এরা (বিএনপি) যে নির্বাচন করবে তাদের নেতা কোথায়? একজন দুর্নীতি আর এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, আরেকজন অর্থপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায়। এই যে দুর্নীতি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই খুঁজে বের করেছে। তাদের (এফবিআই) গোয়েন্দার সাক্ষীতেই কিন্তু তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আবার দেখলাম তাদের (বিএনপি) অফিসের তালা ভাঙছে। সেই রবীন্দ্রনাথের গানটাই মনে পড়ে ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে।’ আমি ঠিক জানি না রিজভী সাহেব এই গান গাইতে গাইতে তালা ভেঙে ছিলেন কিনা। আর তালা ভেঙে কাকে বের করলো তাও জানি না। বলে যে চাবি খুঁজে পাচ্ছে না, তাহলে তালাটা লাগাল কে? এই তালায় কোনো সিলগালা ছিল না, কাজেই এটা পুলিশ লাগায়নি। একটা ভালো তালা তারা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙেছে। এটা একটা নাটক। এই নাটক করে করে মানুষকে কিছু দিনের জন্য ধোঁকা দেওয়া যায়, সব সময়ের জন্য না। যারা মদদদাতা তারা আবার খুশি হয়ে কাছে টেনে নেয়।
এসময় ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বেশি অ্যাম্বিশন নাই। টুঙ্গিপাড়ায় এসে থাকবো, ভ্যানে চড়ে ঘুরে বেড়াবো।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও তার স্ত্রী সাহানা ইয়াসমিন শম্পা, সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও সাবেক এমপি নাজমা আক্তার, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাব উদ্দিন আজম প্রমুখ।
পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রথম সরকারি সফরে শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী বেদীর পাশে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র ফাতেহা পাঠ করে তিনি বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।
দুপুর ১২টা ২ মিনিটে নবগঠিত মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাধি সৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।