চার মোবাইল কোম্পানিকে ১৫২ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ওই আদেশ দেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নেন। আদালতের নির্দেশনায় ওই কমিশনারকে বিদেশ ভ্রমণে ৬০ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
চার মোবাইল কোম্পানিকে ১৫২ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করায় এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা মঙ্গলবার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
ভ্যাট বা মূসকের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক সিদ্ধান্তে চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সুদ মওকুফ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই চার কোম্পানি হলো- গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল।
অভিযুক্ত ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী বর্তমানে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) আছেন। তিনি এনবিআরে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (ভ্যাট) সাবেক কমিশনার।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওয়াহিদা আইনবহির্ভূতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক নির্বাহী সিদ্ধান্তে গ্রামীণফোন লিমিটেডের ছয়টি, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে সাতটি, রবি আজিয়াটাকে দুইটি এবং এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডকে একটিসহ মোট ১৬টি নথিতে ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা অপরিশোধিত সুদ মওকুফ করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চারটি প্রতিষ্ঠানের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর আইনানুগভাবেই ভ্যাট প্রযোজ্য হওয়ায় তা মেনে নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে যথাসময়ে ১৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার কথা বলে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত কর মেয়াদে তা পরিশোধ না করায় মূসক আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য হারে প্রদেয় সুদের পরিমাণ হয় ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৩৭(৩) অনুসারে সুদ আদায়ের জন্য কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী অতি দ্রুত সুদের হিসাব করার নির্দেশ দেন।
সুদ হিসাবে সরকারের পাওনা অর্থের মধ্যে গ্রামীণফোন লিমিটেডের কাছে ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৭ টাকা, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনের কাছে ৫৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫১ টাকা, রবি আজিয়াটার কাছে ১৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬ টাকা এবং এয়ারটেল বাংলাদেশের কাছে ২০ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৫২ টাকা রয়েছে। পরবর্তীকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিন থেকে পাঁচ মাস পর ভিন্ন আদেশে ওই সুদ মওকুফ করে দেন ওয়াহিদা রহমান।
এনবিআর সদস্য হোসেন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দলের প্রতিবেদনেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১৮/৪০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়।