ভয়াবহ ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক জরিপ। এডিসের লার্ভার ঘনত্ব আশঙ্কাজনক মান মাত্রার চেয়ে ব্রুটো ইনডেক্স প্রায় ৪০ বেশি। অর্থাৎ ঢাকার ১৫টি বাড়ির মধ্যে ৭ থেকে ৮টি বাড়িতে মিলেছে এডিসের লার্ভা।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গুর। সাইদুলের মত এমন রোগীর সংখ্যা হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে। ঢাকার অন্য হাসপাতালগুলোতেও আগের থেকে বেশি আসছে রোগী। বর্ষাকাল আসার আগেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
গত মে মাসে জরিপ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার। ওই জরিপে ঢাকার দুই সিটির ১৫ বাড়ির মধ্যে সাত থেকে আটটিতে মিলেছে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি এডিশ মশার লার্ভা। ফলে এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা ডিম পাড়ে পাত্রে জমে থাকা পানির কানায়। এমনকি পাত্রটি যদি একদম শুষ্কও হয়, কিন্তু কিছুটা ভেজা থাকে—সেখানেও ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু রোধে এডিস মশার প্রজননস্থল নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা জরিপের তথ্য মানতে নারাজ দুই সিটি করপোরেশন। তারা দাবি করছেন এডিশের বংশ বিনাশে তাদের কর্মীরা নিরলস কাজ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, দেশে মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৮৮ জন ডেঙ্গু রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় এডিস মশাবাহিত এ রোগে কারও মৃত্যু হয়নি। তবে এক দিনের মধ্যে এত রোগী সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ২৮৮ রোগীর মধ্যে ২৬১ জনই বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০২ জনই বরগুনা জেলায়।
আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৫ হাজার ৩০৩।
এখন পর্যন্ত দেশের মোট আক্রান্তের ৭৫ শতাংশই ঢাকার বাইরের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগের। আর এ বিভাগের বরগুনা জেলায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণের এ জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হয়েছে ১ হাজার ৪০৬। অর্থাৎ দেশের মোট আক্রান্তের ২৬ শতাংশের বেশি বরগুনা জেলায়।