সেকশন

রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দাবি কি বেদবাক্য?

আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:১৯ পিএম

অনেক বছর ধরে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে আসছে। ১৮০টি দেশের প্রতিটির খুবই অল্প সংখ্যক কিছু ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করে দেশগুলোর কোনটি কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করা হয় সে অনুযায়ী দেশগুলিকে ক্রমানুসারে সাজায় প্রতিষ্ঠানটি। এমন পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে কারণ একটি দেশের প্রকৃত দুর্নীতি পরিমাপ করা সহজ নয়। তাছাড়াও কাজটি সম্পন্ন করতে যে বিস্তৃত সমীক্ষা চালাতে হবে, তা ব্যয়বহুল। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়গুলোকে সামনে আনার কাজটি ভালোভাবে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এই কার্যক্রমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ জড়িত রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণগুলো অকাট্য সত্য নয়। ফলে সেগুলো বিকৃত সত্য তুলে ধরতে পারে।

মনে করি, একটি নিম্ন আয়ের দেশের আইন প্রণেতারা একটি পণ্য চুক্তির বাইরে ব্যবসার বিস্তারিত পরিসংখ্যান দেয় না। এতেই দুর্নীতির সন্দেহ তৈরি হয়, কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো, প্রমাণ নেই। ঘটনাটিতে অনিয়ম হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। দোষ ধরতে হলে দোষী কাউকে খুঁজে পেতে তো হবে। কিন্তু বিশেষ ওই দেশটিতে কর্পোরেট লেনদেন ঠিক ত্রুটিহীন নয় এমন ধারণা আগে থেকে করে রাখলে সেই অনুযায়ী দেশটির দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রভাবিত হবে।

তারপরে ধরা যাক, সাংবাদিকরা আসল ঘটনাটি তুলে ধরলো, ‘বড় কোম্পানিগুলো পণ্য চুক্তিটি আটকে দিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ হলো। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এমনটি হতে পারে। তো, সন্দেহ যাচাই করতে কার কাছে যাবে সবাই? অবশ্যই সূচক! তারপর শুরু হবে গল্প বোনা: ‘অমুক দেশটিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে...’। ঘুরেফিরে এটিই দেশটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে পরের বছরের সমীক্ষাতেও দেশটির ভাবমূর্তি খারাপ হয়ে যায়। এভাবেই চলে বছরের পর বছর।

যখন একটি নতুন সরকার এসে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রকদের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন পরিস্থিতি বদলায়। এমন নয় যে, সরকারটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বরং দুর্নীতির ধারণা সূচকে নিজের দেশকে নামিয়ে তুলনামূলক একটি ভালো জায়গায় আনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করতে থাকে ওই সরকার বা সরকারপ্রধানের মনে। কিন্তু অনেকে এটা ভাবে না যে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ওই সূচকটি প্রকৃত দুর্নীতির প্রমাণ নয়।

এমন বিকৃত সত্য তুলে ধরার সূচক তৈরি করে যে প্রতিষ্ঠান, তার কর্মীরা কি ব্যাপারটি বোঝে না? তারা কি অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিবাদ করে না? তারা করেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এই সূচকের মূল স্রষ্টা জোহান গ্রাফ ল্যাম্বসডর্ফ ১৯৯৫ সালে দুর্নীতির ধারণা সূচক উদ্ভাবন করেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকে আন্তর্জাতিক মনোযোগের স্পটলাইটে তিনিই রেখেছেন। ২০০৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোবাস ডি সোয়ার্ডকে জানান, তিনি এই সূচক আর তৈরি করবেন না। খবরটি বেশি প্রচার করতে দেয়া হয়নি। তবে প্রফেসর ল্যাম্বসডর্ফের এমন সিদ্ধান্ত সূচকের চলমান কভারেজের পক্ষে যায় না।

দুর্নীতি সূচক ১৩টি ভিন্ন ধারণা সমীক্ষার মাধ্যমে করা হয়। মূল্যায়ন করেন ‘একদল দেশের অর্থনীতিবিদ’, ‘স্বীকৃত দেশের বিশেষজ্ঞ’, ‘প্রতি দেশে দুইজন বিশেষজ্ঞ’। এসব বিশেষজ্ঞ মূলত লন্ডনের। তবে নিউ ইয়র্ক, হংকং, বেইজিং এবং সাংহাইয়ের বিশেষজ্ঞও আছে। তারা বিশেষজ্ঞদের একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক দ্বারা সমর্থিত। আরও আছে ‘কর্মী এবং পরামর্শদাতা’, ইন-হাউস কান্ট্রি স্পেশালিস্ট, যারা দেশের ফ্রিল্যান্সার, ক্লায়েন্ট এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে। ‘ব্যবসায়িক নির্বাহী’ এবং আরও অনেকে।

এখানে মূল বিষয় এই নয় যে এই সোর্সদের মধ্যে কেউ খারাপ বা ভুল। বিষয় হল তাদেরকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে। ফলাফলে কোনো বৈচিত্র্য নেই। এগুলো ৮০ থেকে ১০০%-র মধ্যে থাকে। কারণ একই ধরনের লোকদের কাছে তাদের ধারণা জানতে চাওয়া হয়। এটা স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এলিট শ্রেণির মতামত নিয়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক বানানো হয়। সাধারণত তারা একইরকম শিক্ষায় শিক্ষিত। এক বা একাধিক জরিপ একটি কোম্পানির জন্য একটি নতুন ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্য খুব দরকারি উৎস হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এমন সব উৎস এক হলে তা কি কোনো দেশের দুর্নীতির আসল চিত্র বা দুর্নীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সত্য তুলে ধরে? 

লেখক: অর্থনীতিবিদ এবং প্রধান নির্বাহী, ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক, ইউকে। 

এআরএস
এবারও দুর্নীতির ধারণা সূচকের প্রতিবেদন প্রকাশ করলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এবার ২৪ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ নম্বর। ২০২৩ সালে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে...
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায় ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল এসিসটেন্ট (আইডিইএ)। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপরও জোর...
কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার কিছু সময় পর এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছিলো অখ্যাত সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন উপমহাদেশের এক অনন্যসাধারণ, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ।
ইরানের শহীদ রাজাই বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন অন্তত ৮০০ জন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত