ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গেলো পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তখন থেকেই আলোচনায় আছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি কি দেশে আছেন, না পালিয়ে গেছেন- এনিয়ে এখন সবখানেই চলছে তুমুল চর্চা।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে ওবায়দুল কাদের সব সময়ই ছিলেন বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে। বিএনপি ছাড়াও আওয়ামী লীগ বিরোধী যে কোনো প্রতিপক্ষকে বাক্যবাণে ঘায়েল করাই ছিলো তার অন্যতম প্রধান কাজ। এনিয়ে তার দেয়া বিভিন্ন বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই চর্চার বিষয়ে হয়ে দাঁড়াতো।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হবার পর থেকেই, এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন ওবায়দুলর কাদের। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি কঠোর অবস্থান নেয়ার হুশিয়ারিও দিতে দেখা গেছে তাকে। এমনকি গণভবনে সবশেষ বৈঠক থেকে বেরিয়ে কারফিউ জারি ও দেখা মাত্র গুলির সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি।
কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে দলীয় নেতাকর্মী, বিশেষ করে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে ওবায়দুল কাদের বিরুদ্ধে। দলের নির্দেশনা পেয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালালেও পরে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে পালাতে হয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের।
এ সময় আওয়ামী লীগ এবং দলের বাইরে ওবায়দুল কাদেরকে সরানোর দাবিও উঠে। ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে তিনি নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে থাকেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অভিমত, আন্দোলন নিয়ে একের পর এক প্রশ্নবিদ্ধ বক্তব্য দিয়ে দল এবং সরকারকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন ওবায়দুল কাদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বৈঠকে। ২৯ জুলাই বিকেলে গণভবনে এক বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে কাদেরের সমালোচনায় মুখর হন জোট নেতারা।
পাঁচ আগস্ট সফল গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই তাই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোথায়? কোটি টাকার এমন প্রশ্নের সঠিক ও নির্ভুল কোনো উত্তর এখনও পাওয়া না গেলেও, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এরি মধ্যে তার দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষকে খুঁজেছেন, নিজ বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কোথায় আছেন সেটি এখনও জানা যায়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার একদিন আগেই দেশ ছেড়েছেন ওবায়দুল কাদের। গত তিন আগস্ট বিকেল থেকেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গা ঢাকা দেন বলে জানা গেছে।
প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে কথা বললেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে মিডিয়ায় কথা কম বলতে দেখা যায় ওবায়দুল কাদেরকে। তিন আগস্ট ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেষবারের মতো কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
পরের দিন থেকে ওবায়দুল কাদেরকে আর কোথায় দেখা যায়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার আগস্ট রাতে দেশত্যাগ করেন তিনি। বর্তমানে সিঙ্গাপুর রয়েছেন। তবে, অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ১৪ আগস্ট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ওবায়েদুল কাদেরসহ গণহত্যায় জড়িত অনেকেই দেশের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছেন। অনতিবিলম্বে তাদের খুঁজে খুঁজে গ্রেপ্তার করার দাবিও জানান তিনি।
নুরুল হক নুরের মতো বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশের মধ্যেই আছেন। সময় সুযোগ মতো তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। এরি মধ্যে ওবায়দুল কাদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হবে।
গত পাঁচ আগস্ট নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে যখন আগুন দেয়া হয়, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা, শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা শুনে সপরিবারে পালিয়ে গেছেন ওবায়দুল কাদের। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্যই নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি।