বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না হওয়ায় প্রতিবাদে আবারও কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক। পাশাপাশি এই দাবিতে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টা থেকে শাহবাগের সড়কে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির (ডিএমজেএস) পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, আন্দোলনকারীরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার পথ খোলা আছে বলে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।
তারা বলেছিলেন, এই সময়ের মধ্যে যদি ঊর্ধ্বতন দায়িত্ববান কেউ এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে, তাহলে আমরা রাস্তায় নামব না। অন্যথায় দুপুর থেকেই আমরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করব। তবে এ সময়ের মধ্যে কোনো আশ্বাস না পেয়ে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। পরে তারা সড়কে অবস্থান নেন।
ট্রেইনি চিকিৎসকরা জানান, দাবি আদায় না হলে তারা শাহবাগে অবস্থান চালিয়ে যাবেন। দেড়টার দিকে চিকিৎসকরা শাহবাগ মোড় বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।
ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। ২০২৩ সালের জুন মাসে এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক। এরপরও বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের গেইটে, শাহবাগে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেছেন, পালন করেছেন গণঅনশন কর্মসূচি।
ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন নবী বলেন, সারা বাংলাদেশের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মবিরতি চলবে। প্রথম দিন আমরা শাহবাগে সমাবেশ করব।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকারি চিকিৎসকদের মতোই রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেই আমরা। কর্মবিরতিতে গেলে রোগীদের চিকিৎসা সংকট হবে। কিন্তু আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা ২০২২ সাল থেকেই আন্দোলন করছি। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে এখন ভাতা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে আমাদের জীবনযাপন ব্যয় নির্বাহ খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। সুতরাং ভাতা না বাড়লে আমরা আন্দোলন থেকে সরব না।
চিকিৎসকরা জানান, সব মিলে দেশে প্রায় ১৩ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় রয়েছেন আট হাজারের মতো। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন হাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন হাজারের বেশি ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫০০ থেকে ১৬০০ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
ডা. নুরুন নবী বলেন, সারাদেশের এসব চিকিৎসক সপ্তাহে ৭০-৭২ ঘণ্টা ডিউটি করেন। প্রতিদিন সকালে আমরাই হাসপাতালে থাকি। এছাড়া বিকেলে ও রাতে রোস্টার ডিউটি করি। বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ওটিÑ এসব বিভাগে রোগীদের সেবা দেই।