এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র শাকিল। ভোলা থেকে ঢাকায় এসে দোকানে কাজ নিয়েছিলো। পাঁচ আগস্ট সন্ধ্যায় পুলিশ ও ছাত্র জনতার সংঘর্ষের মাঝে পড়ে চুরমার হয়ে যায় শাকিলের হাঁটু। এখনও তার চিকিৎসা চলছে পঙ্গু হাসপাতালে। কিন্তু পরিবার আর নিজের ভবিষ্যতের ভাবনায় কপালে তার চিন্তার ভাঁজ।
কারণ দরিদ্র পরিবারে সে-ই একমাত্র অবলম্বন। তাদের সংসারই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। চিকিৎসার টাকা কোথা থেকে পাবে? তাই হাসপাতালের বিছানায় আর দিন কাটতে চায় না শাকিলের। একদিকে পরিবার অন্যদিকে নিজের ভবিষ্যৎ। বিছানায় শুয়ে তার উপলব্ধি মানুষ না পাল্টালে বদলাবে না দেশ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত মো. শাকিল মিয়া (২০) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান (৫১) এর ছেলে। তার মা ফিরোজা বেগম (৪৭)। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শাকিল মিয়া দ্বিতীয়। বড় ভাই শামিম আহম্মেদ (২৬) প্রবাসী।
আহত শাকিলের বাবা এক সময় কাঠ মিস্ত্রির কাজ করলেও এখন বেকার। বাসায় থাকেন। মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী। বাবা মাসহ পরিবারের সকলে থাকেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের চাষাড়া এলাকায়। সেখানেই আন্দোলন চলাকালে চার আগস্ট ছররা গুলিতে বিদ্ধ হন শাকিল। তাঁর পিঠে ও কানে বেশ কয়েকটি গুলি লাগে।
আন্দোলনে আহত হবার সেই দিনটির কথা আর তার মনে নেই। শুধু মনে আছে আহত হয়ে দীর্ঘ সময় সড়কেই পড়েছিলো শাকিল। শুরুতে পুলিশের ভয় হাসপাতালে যেতেই ভয়। এরপর প্রথমে কুর্মিটোলা। তারপর ইবনে সিনা হাসপাতাল। সবশেষ ঠাঁই হয় পঙ্গু হাসপাতালে। হাঁটুর হাড় ভেঙে চুরমার হয়েছিলো শাকিলের।
হাড় জোড়া দিতে এখনও পায়ে লাগানো আছে ফ্রেম। আরও দুই মাসের চিকিৎসার পর এটি খোলা হবে। মা-বাবা এখন গ্রামেই থাকেন। ফিরে গিয়ে শাকিল পড়াশোনা শেষ করে জীবন চালানোর মতো কিছু করতে চায় শাকিল। ছাত্রজনতার আন্দোলন আর আন্দোলন পরবর্তী দেশটাকে ঘিরে যতোটা প্রত্যাশা ছিলো সেটি আর নেই। বরং তার উপলব্ধি মানুষ না পাল্টালে এই সমাজ আর দেশ পাল্টাবে না।