টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলার সাথে লাগোয়া জামালপুর সদর উপজেলার বাঁশচড়া বিট। এই বিটের অধীনে বনভূমির পরিমাণ তিন হাজার দুইশ' ৬৪ দশমিক ৭৭ একর। গত পঞ্চাশ বছরে দখল হয়ে গেছে পুরো বনভূমি। শুধু মাত্র দখলের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বন বিভাগের অফিসের এক একর জমি।
বাঁশচড়া বিটের বাঁশচড়া, জামিরা, বৈঠামারী, ভাগড়া, আজুগীতলা ও ভালুকা মৌজার সব বনভূমির গাছ ও পাহাড় কেটে বসতবাড়ি, খামার ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন অন্তত দুই হাজার দখলদার।
এক সময় আদিবাসীরা বনভূমিতে বসবাস করলেও বাঙালিরা পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলায় বন্ধ হয়েছে আদিবাসীদের জুম চাষ। দখল আর বনভূমির আকৃতি পরিবর্তন করায় বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়।
স্থানীয় আদিবাসীরা বলছেন, ৪০ বছর আগেও পাহাড়ে শুধু আদিবাসীরা বাস করলেও এখন পাহাড় পুরোটায় বাঙালিদের দখলে। বনভূমির গাছ আর পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করায় আদিবাসীদের জীবিকার উৎস জুম চাষ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। বনভূমির আদিবাসীরা এখন সংখ্যালঘু হয়ে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
বনের গাছপালা কেটে ফেলায় জৈববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। বনের চার পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ করাত-কল। শুধু স্থানীয়রাই একা দখল উৎসব করেনি, নানা এলাকা থেকে এসে প্রভাবশালীরাও দখল করেছে বনভূমি। স্থাপন করেছে মুরগীর খামার, গরুর খামারসহ নান স্থাপনা। পাহাড় কেটে করেছেন তৈরি করেছে মাছের প্রজেক্ট।
গজারী, সেগুন, অর্জুনসহ লাখ লাখ বনজ ও ফলজ বৃক্ষ নিধন করেছে এসব দখলদাররা। সরকারি বনভূমির জমি অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে বিক্রি করছে প্লট আকারে।
বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, জামালপুরের বাঁশচড়া বিটের মোট জমির পরিমাণ তিন হাজার দুইশ' ৬৪ দশমিক ৭৭ একর। এরমধ্যে বাঁশচড়া মৌজায় এক হাজার পাঁচশ' ২৩ দশমিক ৮৪ একর, জামিরা মৌজায় পাঁচশ' ৮৪ দশমিক আট একর, বৈঠামারী মৌজায় সাতশ' সাত দশমিক ৩৭ একর, ভাগড়া মৌজায় চারশ' ৩৫ দশমিক ৭০ একর, আজুগীতলা মৌজায় সাত দশমিক ২০ একর ও ভালুকা মৌজায় ছয় দশমিক ০৮ একর। বনভূমির দখলে থাকা এক একর ছাড়া অবশিষ্ট বনভূমি ভুয়া কাগজ তৈরি করে দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।
পাহাড়ে বসবাসকারীরা জানান, স্থানীয় দখলদারদের কাছে জমি কিনে তারা বসতবাড়ি করেছেন।
বনভূমির জমি দখল ও বনের গাছ কেটে প্রথমে আকৃতি পরিবর্তন ও বসতি স্থাপন করে প্রভাবশালীরা। পরে সেসব জমি বিক্রি করে দেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, দিনে ও রাতের আধারে বনের মূল্যবান সব গাছ বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা।
আরো পড়ুন: রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত
ময়মনসিংহ বন বিভাগের রসুলপুর রেঞ্জের ফরেস্টার সাব্বির জাহাঙ্গীর জানান, বাঁশচড়া বিটের সব বনভূমি দখল হয়ে গেছে। মামলা করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না বনবিভাগ। বনের গাছ কেটে ফেলা ও পাহাড় কেটে আকৃতি পরিবর্তন করায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি।
জবরদখলে যাওয়া বন বিভাগের ভূমি উদ্ধার, আদিবাসীদের অধিকার ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশা পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসী এবং পরিবেশ কর্মীদের।
একাত্তর/আরবিএস