মাদারীপুরের শিবচরে ভ্যানচালক পারভেজ ফকিরকে (২৪) ফরিদপুরে ভাঙ্গায় গান শুনতে নিয়ে যায় তার দুই মাদকসেবী বন্ধু এবং সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর পারভেজের ভ্যানটি মাত্র ১০ হাজার একশ' টাকায় বিক্রি করে তারা।
সেই রাতেই হত্যাকারীরা ভ্যান বিক্রির টাকা নেশা করে ও জুয়া খেলে উড়িয়ে দেয়। এমনই চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক তথ্য বের হয়ে এসেছে পারভেজ হত্যাকান্ডে।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ভাঙ্গা থানার এসআই আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে শিবচরের সন্ন্যাসীরচর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পারভেজের দুই বন্ধু হৃদয় মাদবর ও আজিজুল মুন্সীকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে হত্যার মোটিভ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর সকালে শিবচরের বন্দরখোলার ইউনিয়নের রহমতউল্লাহ হাওলাদারকান্দি শশুর বাড়ি থেকে প্রতিদিনের মতো ভ্যান নিয়ে বের হন একই উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের ফকির রনাই মুন্সিকান্দি গ্রামের মো: বাবুল ফকিরের ছেলে পারভেজ ফকির (২৪)। রাতে পারভেজ বাড়িতে না আসায় পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো লাভ হয়নি।
পরদিন ফরিদপুরের ভাঙ্গার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার আড়িয়াল খা নদের তিরবর্তী ধান ক্ষেত থেকে পারভেজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে থাকলেও পরে লাশটি শনাক্ত করা হয়। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। ১৪ দিনের তদন্ত শেষে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, এ হত্যাকান্ডে তার বন্ধুরাই জড়িত।
পুলিশ আরও জানায়, পারভেজের বন্ধু হৃদয় ও আজিজুল মাদকসেবী এবং ব্যবসায়ী। ১৩ অক্টোবর গান শোনার কথা বলে এ দুইজন পারভেজকে ভাঙ্গায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে কোল্ড ড্রিংকসের সাথে নেশাদ্রব্য মিশেয়ে তাকে খাওয়ানো হয়। পরে পারভেজকে ভাঙ্গার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার আড়িয়াল খা নদের তীরবর্ত্তী ধানক্ষেতে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
হত্যাকারীরা পারভেজের ভ্যানটি স্থানীয় একটি বাজারে ১০ হাজার একশ' টাকায় বিক্রি করে। ওই রাতেই তারা ওই টাকা জুয়া খেলে ও মাদক সেবন করে নষ্ট করে ফেলে।
গ্রেপ্তারকৃত হৃদয় মাদবর শিবচরের সন্নাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর শরীফকান্দি গ্রামের সালাম মাদবরের ছেলে ও আজিজুল মুন্সি একই ইউনিয়নের রাজারচর গোবিন্দ মাদবরকান্দি গ্রামের নুরু মুন্সির ছেলে।
আরও পড়ুন: টিকে থাকার শেষ লড়াই টাইগারদের
নিহত পারভেজের স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, ১৩ অক্টোবর তারিখ ভ্যান নিয়ে আমার স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। ১৪ অক্টোবর তারিখ ভাঙ্গা থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
ভাঙ্গা থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, লাশটি পাওয়ার পর আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরু করি। প্রথমেই খোয়া যাওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করি। পরে হত্যাকারী দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। মূলত নেশার জন্য ভ্যান বিক্রির টাকা লুটের জন্যই তারা পারভেজকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। ভ্যান বিক্রির ওই টাকা এক রাতেই তারা নেশা করে ও জুয়া খেলে উড়িয়ে ফেলেছে।
একাত্তর/আরবিএস