কুড়িগ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুলে সন্তানের থেকে বাবার বয়স কম হবার ঘটনায় একজন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই বছর।
পরিবারের সদস্যদের দাবী, জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও সুরহা না পেয়ে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান ৯৪ বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী।
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গমারী উপজেলার চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুলার কুটি গ্রামের মৃত বাবন শেখের পুত্র মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী।
প্রায় ৪৩বছর বয়সে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের মধ্যে যুদ্ধের আগে তিন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছিল।
তিনি ২০০৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। তবে ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য অনলাইনে পূরণ করতে গিয়ে জন্ম তারিখে ত্রুটি থাকায় ভাতা বন্ধ হয়।
জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১১ আগস্ট, ১৯২৮ সাল। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১০ মে, ১৯৭১ সাল।
অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রে বড় ছেলে আমির হোসেনের জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ২ মার্চ, ১৯৬০ সাল। অর্থাৎ বাবার থেকে ছেলে বড়।
শুধু তাই নয়, বোনদের জন্ম সাল দেখানো হয়েছে ১৯৫০ ও ১৯৬০ সাল। জাতীয় পরিচয় পত্রের এমন ত্রুটির কারণে প্রায় দু’বছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ রয়েছে এই মুক্তিযোদ্ধার।
স্বজনরা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ও বেসামরিক গেজেটে নাম থাকলেও কোন সুবিধা পাচ্ছে না আকবরের পরিবার।
গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান এই মুক্তিযোদ্ধা। আকবরের স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া বলেন, ভাতা বন্ধ হবার পর থেকে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা হয়নি তার।
বড় ছেলে আমির হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় বাবার বয়স দিয়েছে ১৯৭১ সাল। এই জন্ম তারিখ ঠিক করতে যেখানেই গেছেন সেখানেই ঘুষ চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে হারিছের ডিএনএ টেস্ট
এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা জানান, আকবর আলী নিয়মিতভাবেই ভাতা পেতেন। কিন্তু অনলাইনে পূরণ করতে গিয়ে তিনি জন্ম তারিখের ত্রুটির কারণে ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।