ছবিতে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু (বামে) ও সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকত (ডানে)
নাটোরে মাদ্রাসা শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা ও লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় নাটোর শহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুপুরে কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হয়বতপুর গোলাম ইয়াসিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু এবং তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহাবুব হাসান শরিফ বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে গঠন করা হয় হয়য়বতপুর ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ। ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারী রিয়াজুল ইসলাম মাসুম। এতে ক্ষুব্ধ হন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু এবং তার সমর্থকরা।
এরপর থেকেই অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকদের চাপ দিতে থাকেন কমিটি পরিবর্তনের জন্য।
মাস দেড়েক আগে তাকে (অধ্যক্ষকে) ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিয়ে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি এবং হুমকি-ধমকি দেন চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা। এমনকি বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিতে চৌকিদার পাঠান চেয়ারম্যান কালু।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে মাদ্রাসায় এসে চেয়ারম্যান এবং তার সমর্থকরা শিক্ষকদের গালিগালাজ করতে থাকে। প্রতিষ্ঠানে গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে মারধর করেন চেয়ারম্যান এবং তার সমর্থকরা।
পরে তারা ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে ধরে নিয়ে যায় লক্ষীপুর-খোলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসক ওই শিক্ষককে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষককে মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদের তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছে শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জামা-কাপড় ছেড়া অবস্থায় ওই শিক্ষককে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। এসময় জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এবং পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মাদ্রাসার ভেতর বহিরাগত লোকজনের ভিড় দেখে তিনি সেখানে যান। তিনি দেখেন ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানের সাথে শিক্ষক জাফর বরকতকের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। এসময় তিনি উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করতে গেলে জাফর বরকত তাকে চেয়ার ছুড়ে মারে। জনতার সামনে তাকে শিক্ষক জাফর বরকত অপদস্থ করতে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করে। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই শিক্ষককে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে যান।
ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান সৌম্য অধিকারী বলেন, কলেজের কিছু অনিয়ম দুর্নীতির খবর জানতে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে বুধবার ওই প্রতিষ্ঠানে যান তিনি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্যামেরা বের করতেই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জাফর বরকত উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি সকল শিক্ষককে কোন প্রকার সাক্ষাতকার না দেয়ার নির্দেশ দেন।
একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে জাফর বরকত তার ওপরে হামলা করে এবং ধাক্কা দিয়ে ক্যামেরা ফেলে দেয়। পরে লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু এসে শিক্ষক জাফর বরকতকে থামতে বলতে তিনি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুকে লাঞ্ছিত করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রতিবেদন না করেই তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলেও জানান সৌম্য।
জানতে চাইলে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, হয়বতপুর গোলাম ইয়াসিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার কি ঘটেছে তা পুলিশ তদন্ত করছে। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ যাতে ঠিক থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান সৌম্য অধিকারীকে লাঞ্ছিতের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহাবুব হাসান শরিফ বলেন, ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান সৌম্য অধিকারী তার অনুমতি নিয়েই মাদ্রাসায় যান। কিন্তু তিনি (অধ্যক্ষ মাহাবুব হাসান শরিফ) অসুস্থতার কারণে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকার ফলে এই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে কৃষক
অধ্যক্ষ মাহাবুব হাসান শরিফ বলেন, জাফর বরকত এবং সৌম্য অধিকারীর বাকবিতণ্ডা হয়েছে কিন্তু লাঞ্ছিত করার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত।
একাত্তর/আরএ