নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্ছনার ঘটনায় ১১ দিনেও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় আগামী রোববার (১৪ আগস্ট) জেলা শহরে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থিত সিভিল সার্জনের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বি.এম.এ) জেলা শাখা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বি.এম.এ নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি ডা. মমতাজুল ইসলাম চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি মো. মজিবুল হাসান চৌধুরী শাহীন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গত ১ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা শহরের টুপির মোড় এলাকার আবু হানিফা (৫৭) নামের এক রোগী বুকে ব্যথা নিয়ে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি হন।
এসময় সম্ভাব্য সকল চিকিৎসা শেষে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে অ্যাম্বুলেন্সে উঠার সময় ওই রোগী মারা যান।
মৃতের স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় নীলফামারী পৌরসভার ছয় নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাহফুজার রহমান শাহ্ চিৎকার করতে করতে ১৫ থেকে ২০ জনকে সঙ্গে নিয়ে জরুরী বিভাগে আসেন। এসময় তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালক আনোয়ার হোসেনকে চরথাপ্পর ও ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন ও কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়ের ওপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ তাদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন।
এ ঘটনায় ২ আগস্ট নীলফামারী সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলা দায়েরর ১১ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে একই দাবিতে ৮ আগস্ট মানববন্ধন সমাবেশ করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে সংগঠনটি।
বি.এম.এ জেলা শাখার সহ-সভাপতি মো. মজিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘গত ৮ আগস্ট জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি দিলে তারা আমাদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এর আগে মানববন্ধন করেছি আজকে সংবাদ সম্মেলন করছি। আগামী রোববারের মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করা না হলে সরকারি হাসপাতালের সকল সেবা নিশ্চিত করে নীলফামারী শহরের সকল চিকিৎসকগণ তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখবেন। এর পরেও আমাদের দাবি আদায় না হলে বৃহৎ আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, ঘটনার সময় জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছিলেন শাকিল সাইমুম চৌধুরী। ঘটনার পর ২ আগস্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু আল হাজ্জাজ।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে পৌর কাউন্সিলর মো. মাহফুজার রহমান শাহ্ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা আমাকে ফোন করে ডাকেন। এরই মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। সেখানে পৌঁছে স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা দেখতে পাই। আমি তাদের শান্ত করি। আমার মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স বা অন্য কোনো কর্মচারী লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেনি। আমি ওই মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।’
বিএমএ নীলফামারী জেলা সভাপতি মো. মমতাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে কার্ডিয়াক ইউনিট নেই, এখানে কার্ডিয়াক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল কোনোটাই নেই। কার্ডিয়াক ইউনিট করা গেলে কার্ডিয়াক চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে। এটা হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কার্ডিয়াক ইউনিট করার ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। এখানে যারা চিকিৎসাসেবার সঙে জড়িত সকলে আন্তরিক। কিন্তু এভাবে চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করা হলে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলবেন। চিকিৎসা সেবার মান ভালো হবে না।’
আরও পড়ুন: ১০ টাকার জন্য অটোচালক খুন, গ্রেপ্তার দুই
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘যিনি এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি এবং একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। আমরা দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।’
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউপ বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধা, এবং চিকিৎসক নার্স কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগে গত ২ আগস্ট পৌর কাউন্সিলর মো. মাহফুজার রহমান শাহ্-এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি বারবার স্থান পরিবর্তন করায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
একাত্তর/এসজে