মাদারীপুরে মোটরসাইকেল চালক শাহাদাত ঘরামী (২৮) হত্যা মামলায় ৩ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় দেন। মৃতুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার রামনগর গ্রামের সুলতান শরিফের ছেলে সেন্টু শরীফ (৩৫), কমলাপুর গ্রামের মান্নান ফকিরের ছেলে মিরাজ ফকির (৩০) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর এলাকার মৃত জিন্নাত শেখের ছেলে ফজেল শেখ (৫০)।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বড়দুলালী গ্রামের মোকসেদ ঘরামীর ছেলে শাহাদাত ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করতেন। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শাহাদাতকে সাথে নিয়ে বার্থী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন প্রতিবেশি মিরাজ ও সেন্টু। পরে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে রাতে শাহাদাতকে কাঁদা-পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মরদেহটি তাদের আত্মীয় ফজেল শেখের মাধ্যমে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকিনওহাটা এলাকার একটি জঙ্গলে ফেলে চলে যায়।
ঘটনার পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর একটি লাশ দেখে থানা পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ গিয়ে শাহাদাতের মরদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় ১৩ সেপ্টম্বর নিহতের বাবা মোকসেদ ঘরামী বাদী হয়ে মিরাজ ফকির, সেন্টু শরীফ, ফজেল শেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো বেশ কয়েকজনকে আসামী করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে তৎকালীন সদর থানার পুলিশের এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষ ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ৩ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত বিভিন্ন সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১০ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া ও যুক্তিতর্ক শেষে দোষ প্রমাণ হওয়ায় সোমবার দুপুরে ৩ জনকে মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করেন আদালত। তবে আসামীরা পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার সময় কেউ উপস্থিত ছিলো না।
মামলার বাদী মোকসেদ ঘরামী বলেন, ‘ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। ও একজনের কাছ থেকে প্রতিদিন আড়াইশো টাকা ভাড়া দেয়ার চুক্তিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিলো। আদালত আসামীদের ফাঁসির রায় দিয়েছে। এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট। এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।’
নিহতের মা জহুরা বেগম বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের জন্য আমার পোলাডারে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি ছেলে হত্যার রায় পেয়েছি। মরার আগে যেন অন্তত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখে মরতে পারি।’
মাদারীপুর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, ‘এটি একটি নৃশংস হত্যা মামলা। একটি গরীব ঘরের সন্তানের ভাড়ায় চালানো মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটনায় আসামীরা। এদের মধ্যে আসামী মিরাজকে গ্রেপ্তারের পর ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দেয়। জামিনে বের হবার পর থেকে পলাতক মিরাজ। দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এই মামলার ৩ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।’