পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় জেলের জালে প্রায় ২০০ বছর বয়সে একটি কচ্ছপ ধরা পড়ে। ৫০ কেজি ওজনের কচ্ছপটি পরে পরিবেশবাদী সংগঠন ও বনবিভাগের সহযোগিতায় আবারও জলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রোববার ভোর ছয়টার দিকে উপজেলার পক্ষিয়া বন সংলগ্ন আগুনমুখা নদীতে সাইফুল ইসলাম নামে এক জেলের জালে ধরা পড়ে। এদিন বিকেল পাঁচটার দিকে কচ্ছপটি ওই নদীতেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
জেলে সাইফুল ইসলাম জানান, মাছ ধরার জন্য শনিবার রাতে নদীতে জাল ফেলি। ভোরে সেই জাল তোলার সময় প্রায় ৫০ কেজি ওজনের একটি কচ্ছপ ধরা পড়ে। বের করার সময় জালটি ছিঁড়ে গেছে। কচ্ছপটি লোন্দা স্লুইজ গেইটে আনা হলে শত লোক দেখতে ভিড় করে।
এনিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালী ও প্রাণী কল্যাণ পরিবেশবাদী সংগঠনের গলাচিপা উপজেলার টিম লিডার মো. সোহেল হোসেন রাসেল বলেন, কচ্ছপটির নাম জলপাইরাঙা কাছিম (Olive ridley sea turtle/Lepidochelys olivacea) বাংলাদেশে এটি পান্না কাসিম নামে পরিচিত ।
জেলে ফারুক মিয়া ও ওয়াসিম মৃধা জানান, এ ধরনের কচ্ছপ আগে কখনও জালে ধরা পড়েনি।
পক্ষিয়া বন বিভাগের বিট অফিসার মো. জামাল হোসেন জানান, কাছিমটির বয়স দেড় থেকে ২০০ বছর হবে। এর ওজন প্রায় ৫০ কেজি ।
গলাচিপা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিকেল পাঁচটার দিকে পানপট্টি এলাকার সংলগ্ন আগুন মুখা নদীতে ট্রলার যোগে কচ্ছপটি অবমুক্ত করা হয়েছে।
পান্না কাছিম সাতটি সাগর কচ্ছপের ক্ষুদ্রতম প্রজাতিগুলোর একটি। এই প্রজাতির কাছিম প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর এলাকার উষ্ণ পানিতে বাস করে। বাংলাদেশে এই প্রজাতির কাছিমের প্রধান আবাসস্থল হলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সুন্দরবন এবং বঙ্গোপসাগরের অন্য দ্বীপপুঞ্জ।
জলপাইরঙা সাগর কাছিম বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার উপকূলে দেখা যায়। প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের ভারত, আরব, জাপান, মাইক্রোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এর উপকূল এলাকা এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় ব্রাজিল, সুরিনাম, গায়ানা, ফ্রেঞ্চ গায়ানা এবং ভেনেজুয়েলার উপকূল এলাকায় এদের দেখতে পাওয়া গেছে।
ক্যারিবিয়ান সাগরের পুয়ের্তো রিকো, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, চিলির উপকূল আর ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরেও এদের পাওয়া গেছে। এদের পরিযায়ী গতিবিধির উপর বিস্তর গবেষণা না হলেও অন্তত ৮০টি দেশের উপকূল ব্যবহার করার তথ্য পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকভাবে এই প্রজাতিটি প্রাচুর্যময়। ১৯৬৮ সালেই কেবল মেক্সিকো উপকূল থেকে ১০ লাখ জলপাইরঙা সাগর কাছিম আহরণ করা হয়েছিল।
প্রজননের অন্যতম জায়গা গোয়াতে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ এদের প্রজননের সময়কাল। স্ত্রী কাছিম হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদের জন্মস্থানে ফিরে আসে ডিম পাড়বার জন্য। পুরুষ কাছিম কখনও ডাঙ্গায় ওঠেনা।