দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বহু সাধারণ মানুষের কবর খুঁড়েছেন মনু মিয়া। তার ডায়েরির তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত খুঁড়েছেন তিন হাজার ৫৭টি কবর। নিঃস্বার্থ এই পথচলায় বাহন ছিল একটি ঘোড়া। ৭৬ বছরের এই বৃদ্ধ বাহনটির নাম দিয়েছিলেন ‘বাহাদুর’। অথচ তিনি যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী, তখন তার সবচেয়ে বড় অবলম্বটিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও ঘোড়টির মৃত্যুর খবর এখনও কানে যায়নি মনু মিয়ার। তার পরিবার বলছে, এতো বড় শোক হয়তো তিনি নিতে পারবেন না।
মনু মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বয়স এখন ৭৬ বছর।
কথা হয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনু মিয়ার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাহাদুর শুধু একটা প্রাণী না, সে জীবনের সঙ্গী। ওর সঙ্গেই আমি বহু কবরস্থানে গেছি।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মনু মিয়া ১৪ মে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন রাজধানীর একটি হাসপাতালে। নিঃসন্তান মনু মিয়ার অনুপস্থিতিতে অভিভাবকহীন হয়ে যান ঘোড়াটি। গত ১৬ মে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার হাশেমপুর ছত্রিশ গ্রামের একটি মাদ্রাসার পাশে ঘোড়াটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন। স্থানীয়দের ধারণা, ইচ্ছে করেই ঘোড়াটি মেরে ফেলা হয়েছে।
মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বলেন, তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের শেষ বিদায়ের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। এমন একজন মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণে সবাই স্তব্ধ। ঘোড়ার শূন্যতা পূরণ হবে না, তবে মনু মিয়ার পাশে সবাই যেন পাশে দাঁড়ায়। তিনি জানান, এলাকাবাসী ঘোড়ার হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার সাংবাদিকদের জানান, মিঠামইন থানার অফিসার ইনচার্জকে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বহু মানুষের শেষ ঠিকানা সুন্দর পরিপাটি করে সাজিয়ে দিতেন মনু মিয়া। তাকেই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সইতে হবে প্রিয় পোষ্যের হত্যার যন্ত্রণা। নিজের ধানি জমি বেচে ঘোড়াটি কিনেছিলেন তিনি। স্বজনরা বলছেন, ঘোড়া বাহাদুরকে ছাড়া মনু মিয়ার জীবন অসম্পূর্ণ। তার প্রিয় ঘোড়া, যেটিকে নিয়ে তিনি বছরের পর বছর মৃত্যুসংবাদ শুনলেই ছুটে যেতেন, সেটিকে তার অনুপস্থিতিতে নির্মমভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।