হলিউডের স্বর্ণযুগের সেরা অভিনেত্রীদের একজন এলিজাবেথ টেলর। শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরুর পর তার দীর্ঘ এক ক্যারিয়ার। রুপালি পর্দায় ইতিহাস গড়ার সাথে তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিলো আকর্ষণীয়।
প্রথম অভিনেত্রী হিসেবে মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। এটা ঘটে তার সিনেমা ‘ক্লিওপেট্রা’র ক্ষেত্রে। ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ জেনেডির বেতন যখন ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার তখন এই ছবির জন্য ১০ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন টেলর। সেই সময়ের জন্য এটা বিশাল বড় ঘটনা।
শরীর, স্বাস্থ্য কোনোকালেই ঠিকঠাক ছিল না এলিজাবেথ টেলরের। সারা জীবনই সংগ্রাম করেছেন। জন্মই হয়েছিল মেরুদণ্ডের পাশে একটি হাড় বাঁকা নিয়ে (স্কলিওসিস)। ১৯৪৪ সালে ‘ন্যাশনাল ভেলভেট’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় কোমর ভেঙে যায়, ১৯৫৬ সালে হয় বড় একটি অস্ত্রোপচার। এর বাইরে ছিলো মদ্যপানের অভ্যাস। জীবনভর ব্যথানাশক নিতে নিতে শরীরও হয়ে পড়ে দুর্বল। জীবনের শেষ দুই দশক নানা ধরনের অসুস্থতা জাঁকিয়ে বসে শরীরে, নিউমোনিয়া হয়। ত্বকের ক্যানসার থেকে সেরে ওঠেন, হৃদতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়।
সারা জীবনে ৭০ বারের বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি, ২০ বারের বেশি বড় ধরনের অস্ত্রোপচার হয় এলিজাবেথ টেলরের।
ব্যক্তিজীবনে সম্পর্কের ক্ষেত্রে থিতু হতে পারেননি, বিয়ে করেছিলেন আটবার। এর মধ্যে অভিনেতা রিচার্ড বার্টনকে দুইবার বিয়ে করেন।
বিয়ে নিয়ে নিজেই মজা করে বলেন, ‘সাতজনকে আটবার বিয়ে করেছিলাম!’
এলিজাবেথ টেলরের অলংকারের সংগ্রহ ছিল ঈর্ষণীয়। এর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত ৩৩.১৯-ক্যারেট ডায়মন্ড। তার তৃতীয় স্বামী মাইক টডের কাছ থেকে বহুমূল্য একটি হীরার মুকুট পেয়েছিলেন, যা পরে তিনি ১৯৫৭ সালের অস্কার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুর পর ১ হাজার ৭৭৮টি অলংকারের খোঁজ পাওয়া যায়, যা বিক্রি করে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়।
এলিজাবেথ টেলরকে ‘পিপল-কন্যা’ বললেও ভুল হয় না। প্রখ্যাত সাময়িকী পিপল-এ ১৪ বার প্রচ্ছদ হয়েছিলেন তিনি। ধারণা করা হয়, এক হাজারের বেশি সাময়িকীর প্রচ্ছদ হয়েছিলেন তিনি অনেক ‘প্রথম’-এর অংশ এলিজাবেথ টেলর। তিনিই প্রথম তারকা, যিনি নিজের জন্য আলাদা সুগন্ধি তৈরি করিয়েছিলেন। তিনি সুগন্ধি খুব ভালোবাসতেন। ভক্তরা তার তৈরি সেই পারফিউমের নাম দিয়েছিলেন ‘ভায়োলেট আইজ’।
আমেরিকান পিতামাতার কন্যা এলিজাবেথ টেলর লন্ডনে ১৯৩২ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ইউনিভার্সাল পিকচার্স ফিল্ম ‘দেয়ার ইজ ওয়ান বর্ণ এভরি মিনিট’ এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন। রবার্ট টেলর এবং জোয়ান ফন্টেইনের সাথে ঐতিহাসিক দুঃসাহসিক মহাকাব্য ‘ইভানহো’তেও অভিনয় করেছিলেন এলিজাবেথ টেলর।
১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এলিজাবেথ টেলর নিজেকে জনহিতকর কাজে উৎসর্গ করেছিলেন, যার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি নাগরিক পদক সহ বেশ কয়েকটি প্রশংসা পেয়েছিলেন।