পাট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিশ্বকে নতুন এক এন্টিবায়োটিকের খোঁজ দিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। যা বেশ কয়েকটি শক্তিশালি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভাল কাজ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের দু’জন অধ্যাপক হাসিনা খান ও রিয়াজুল ইসলাম এবং জীন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে গবেষক দল এই এন্টিবায়োটিকের আবিস্কার করেছেন।
যার নাম তারা দিয়েছেন- হোমিকরসিন। বিজ্ঞান গবেষণার বিখ্যাত জার্নাল ‘ন্যাচারে’ তাদের সেই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাট নিয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান। পাটের জীবন রহস্য বের করতে গিয়ে তিনি এর বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের অনুজীবের সন্ধান পান।
সেই সব অণুজীবের প্রকার আর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কি হতে পারে তা জানার আগ্রহ থেকেই একই বিভাগের অণুজীব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে শুরু হয় নতুন গবষেণা।
রিয়াজুল ইসলাম দেখতে পান পাটের তন্তুর খাজে খাজে ৫০ এরও বেশির অণুজীব বা ব্যাকরিয়া বাস করে। সেসব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া খুজে পাওয়া যায়; যা তার শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে যাতে আবার অন্য ব্যাকটেরিয়া মারা যায়।
তাহলে কি আছে সেই ব্যাকরিয়ার মধ্যে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কাজটুকু শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন।
আর তাতে করেই বেরিয়ে আসে নতুন এক এন্টিবায়োটিকের খোঁজ যা বাঁচিয়ে দিতে পারে এন্টিবায়োটিক রেজিটেন্স হওয়া অনেক রোগীকে।
তিন বছর ধরে চলা এই গবেষনায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ তাদের পাশে ছিলেন। গবেষক দলে বিসিএসআই এর প্রতিনিধি সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।
আরও পড়ুন: এবারের বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
২৭ মে বিজ্ঞান গবেষণার বিখ্যাত জার্নাল ন্যাচারে তাদের নতুন এন্টিবায়োটিক পাবার গবেষণা পত্রটি প্রকাশ পেয়েছে। যে ব্যাকটেরিয়া থেকে এই এন্টিবায়োটিকটি আবিস্কার হয়েছে তার নাম স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস (Staphylococcus Hominis MBL-AB63) আর পাটের বৈজ্ঞানিক নাম (Corcorus Olitorius) করকোরাস ওলিটোরিয়াস। তাই ব্যাকটেরিয়া আর পাটের সাথে মিলিয়ে এই নতুন এন্টিবায়োটিকটির নাম দেয়া হয়েছে (Homicorcin) হোমিকরসিন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত বেশির ভাগ এন্টিবায়োটিকের সাথে এখন অনেক জীবাণু খাপ খাইয়ে ফেলেছে। হাসপাতালে থেকেই অনেকে সুপার বাগ হিসেবে পরিচত এমন কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হচ্ছেন যা প্রচলিত কোন এন্টিবায়োটিকে নিরাময় করা যাচ্ছে না।
সেই রকম ব্যাকটেরিয়াও এই নতুন এন্টিবায়োটিকে ধংস হচ্ছে। আর নুতন আবিস্কৃত এই হোমিকরসিনের ৫টি ধরন পাওয়া গেয়ে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারে। আর সেই ইতিহাসে লেখা থাকবে বাংলাদেশের নাম।
একাত্তর/এসএ/আরএইচ