সৌদি আরবের মরুভূমির মাঝে গড়ে উঠছে আস্ত একটা ‘জাদু’ শহর । সেখানে থাকবে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হোটেল, ভাসমান পরিকাঠামো, কৃত্রিম সমুদ্রের মাঝে আস্ত দ্বীপ।
২০২১ সালে ‘দ্য লাইন’ নামের এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ঘোষণা করে সৌদি সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে এখন পুরোদমে এগিয়ে চলছে সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের স্বপ্নের শহর নিওম ।
সৌদি আরবের এক কোণে বিস্তৃত অনুর্বর জমি। চারপাশে ধূ ধূ মরুভূমি। বালি, কড়া রোদ আর নোনা জল ছাড়া কিছুই ছিল না সেই জমিতে। এবার সেই জমিরই চেহারা বদল করতে চলেছেন সৌদি যুবরাজ।
সৌদির যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমানের স্বপ্ন, মরুভূমির মাঝে আস্ত একটা জাদুর শহর গড়ে তোলার। সেখানে থাকবে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হোটেল, ভাসমান পরিকাঠামো, কৃত্রিম সমুদ্রের মাঝে আস্ত দ্বীপ।
মরুভূমির মাঝে এই শহরের নাম দেওয়া হয়েছে নিওম। ১৪ হাজার ২০০ বর্গমাইল জুড়ে গড়ে উঠতে চলেছে সেই আধুনিক শহর। তার মধ্যে থাকছে ১২টি প্রকল্প।
কী নেই নিওমে! দুনিয়ার সব থেকে বড় ভাসমান পরিকাঠামো, সি-হর্স আকৃতির দ্বীপ। তৈরি হবে প্রযুক্তি হাব। যুবরাজ সালমানের আশা, এর ফলে দেশে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাবে, অর্থনীতি মজবুত হবে।
প্রকল্পগুলির খরচ ৫০,০০০ কোটি ডলার থেকে এক লক্ষ কোটি ডলার হতে পারে। ২০২১ সালে ‘দ্য লাইন’ প্রকল্পের ঘোষণা করে সৌদি সরকার। প্রকল্পে দু’টি সমান্তরাল বহুতল তৈরি হবে দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার।
একটির উচ্চতা ২৭৫ মিটার, দ্বিতীয়টির ২২৫ মিটার। দু’টি বহতলের মধ্যে সংযোগ রক্ষার জন্য থাকবে ঝুলন্ত সেতু। সেই ঝুলন্ত সেতু দিয়ে যাতায়াত করবে ট্রেনও।
একসঙ্গে এই জোড়া টাওয়ারে ৯০ লাখ মানুষ বাস করতে পারবেন। আবাসনের পাশাপাশি বহু দফতর থাকবে দুই বহুতলে। জনপদে কোনও রাস্তা থাকবে না। চলবে না গাড়ি।
দোকান, বাজার থাকবে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে। ড্রোন, রোবট, ভোলোকপ্টার জিনিসপত্র পৌঁছে দেবে। গোটা জনপদে আলো জ্বলবে, যান, যন্ত্র চলবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির মাধ্যমে।
মরুভূমিতে এমনিতে বৃষ্টির দেখা মেলে না। তবে নিওমে মেঘ তৈরির জন্য যন্ত্র থাকবে। প্রয়োজন মতো বৃষ্টি উৎপন্ন করানো হবে। আকাশে সব সময়ই থাকবে কৃত্রিম চাঁদের আলো।
সি হর্স আকৃতি বিশিষ্ট কৃত্রিম দ্বীপও তৈরি করা হচ্ছে নিওমে। নাম ‘সিন্দালাহ’। আয়তন আট লক্ষ ৪০ হাজার বর্গমিটার। এখানে থাকবে বিলাসবহুল কিছু রিসোর্ট। ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হবে প্রকল্পের কাজ।
২০২৬ নাগাদ শেষ হবে ‘ট্রোজেনা’ প্রকল্পের কাজ। তাবুক অঞ্চলের উচ্চতম পাহাড়ের মাথায় তৈরি হবে প্রকল্প। সেখানে থাকবে স্কি করার জায়গা। ২০২৯ সালের এশিয়ান উইন্টার গেমস হবে এখানেই।
পরিবেশবিদেরা এই প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নিওমের কারণে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পথ ভুল করতে পারে এখান দিয়ে যাতায়াত কর পরিযায়ী পাখিরা।