সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘনীভূত হচ্ছে, ইরান-ইসরাইল সঙ্কট। গেলো ১ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ড লক্ষ্য করে ইরানের ‘ট্রু প্রমিস-২’ অভিযানের পর প্রতিশোধের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে তেল আবিব। ইরানকে কিভাবে জবাব দেবে সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে রোববার সভায় বসেছিলো ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
সেই সভার সিদ্ধান্ত জানা না গেলেও, এই পরিস্থিতির মধ্যে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে দেশটিতে একটি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরোধী ব্যবস্থা (থাড) পাঠানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, এই নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখভাল করতে ইসরাইল যাচ্ছে ১০০ জন মার্কিন সেনাও।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও কাতারভিক্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলে থাড প্রতিরক্ষা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পেন্টাগন। তারা জানিয়েছে, ইসরাইলে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ব্যবস্থা ও সেনা পাঠানো হচ্ছে। এতে ব্যালিস্টিক মিসাইলেরর বিরুদ্ধে ইসরাইলকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ইসরাইলে শত শত মিসাইল নিক্ষেপ করার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই ঘোষণা এলো। যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান বার্তা দিয়েছে তারা যেন তাদের সেনাদের ইসরায়েলে না পাঠায়। এতে তাদের সেনারা ঝুঁকিতে পড়বে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ রোববার বলেছে, পেন্টাগনের প্রধান লয়েড অস্টিন ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য একটি টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছেন। থাড ব্যাটারি ইসরাইলের সমন্বিত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে।
পেন্টাগন বলেছে, ইরানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে শীর্ষ মিত্র ইসরাইলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবেই এই সামরিক সহায়তা দিয়েছে জো বাইডেনের প্রশাসন। এই পদক্ষেপ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা এবং দেশটিতে মার্কিনদের ইরানের যে কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করবে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার বলেছেন, থাড ব্যাটারি মোতায়েন ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সহায়ক হবে। থাড ব্যাটারি পরিচালনা করতে সাধারণত অন্তত ১০০ সেনা প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্র নির্মাতা লকহিড মার্টিন থাড ব্যবস্থা তৈরি ও সুসংহত করে।
থাডগুলোকে স্বল্প, মাঝারি ও মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে গুলি করার জন্য ডিজাইন করা। তবে কত দ্রুত এই ব্যবস্থা ইসরাইলে মোতায়েন করা হবে তা জানাননি মার্কিন কর্মকর্তারা। এর আগে ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণ ও বিমান প্রতিরক্ষা মহড়ার জন্য একটি থাড ব্যাটারি ইসরাইলে পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে থাডের। ছ’টি লঞ্চার বিশিষ্ট হাতিয়ারকে ট্রাকে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। থাডে আছে ৪৮টি ইন্টারসেপ্টর, রেডিও ও রাডার সরঞ্জাম। এটিকে চালানোর জন্য বিশেষ বাহিনী দরকার হয়।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েচেন, ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েন করতে গিয়ে আমেরিকা তাঁদের সৈনিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে। আমরা এ এলাকায় সর্বাত্মক যুদ্ধ ঠেকানোর সব রকম চেষ্টা করেছি। কিন্তু স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইরানের স্বার্থরক্ষায় কোনও হুমকি মেনে নেয়া হবে না।
গত ১ অক্টোবর ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইরান। ইসরাইলের তিনটি আলাদা ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও এসব ব্যবস্থা মিসাইলগুলো আটকাতে ব্যর্থ হয়। আর ইরানের ১ অক্টোবরের হামলার পর দেশটিকে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দেয় দখলদার ইসরাইল।
ইসরাইল এখন পর্যন্ত এই হামলার জবাব কীভাবে দেবে তা জানায়নি। তবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, যে তাদের হামলাটি মারাত্মক ও বিস্ময়কর হবে। এনিয়ে তেল আবিব ও ওয়াশিংটনের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা হলেও ইরানের পারমাণু ও তেলক্ষেত্রে হামলার পক্ষে নয় বাইডেন প্রশাসন।