বিভিন্ন সময় বিদেশের মাটিতে টার্গেট করে চালানো বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নাম এসেছে। বিশেষ করে এসেছে তাদের গোয়েন্দা তৎপরতার কথা। ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার প্রথমদিনেই ইরানে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। তবে এ ধরনের হামলা এটিই প্রথম নয়।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে ইসরাইল কীভাবে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে এত সফল অভিযান চালাতে পারে? ইসরাইলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে? তাদের কী ধরনের সক্ষমতা রয়েছে?
ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও গোপন তৎপরতা বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিভিন্ন সময় বিদেশি ভূখণ্ডে পরিচালিত গুপ্ত হামলা, শীর্ষ নেতৃত্বের লক্ষ্যবস্তু হওয়া এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের রহস্যজনক মৃত্যু- সব কিছুর পেছনে রয়েছে ইসরাইলের অত্যাধুনিক গোয়েন্দা বাহিনীর ছায়া।
বিশ্লেষকরা মনে করে, এসব অভিযানের সফলতার পেছনে রয়েছে ইসরাইলের অত্যাধুনিক ও বহুস্তরের গোয়েন্দা কাঠামো। ইসরাইলের প্রধান দুটি গোয়েন্টা ইউনিটের একটি হচ্ছে মোসাদ। এটি ইসরাইলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা। গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে। এই সংস্থার মূল কাজ বিদেশে গুপ্তচর নিয়োগ, শত্রু রাষ্ট্রে বিশেষ অভিযান চালানো ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা।
এরপরই নাম আসবে শাবাক বা শিন বেট। এই সংস্থাটি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা এবং গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে আসা হুমকি প্রতিরোধে কাজ করে। শিন বেট নিজেকে অদৃশ্য ঢাল হিসেবে উল্লেখ করে।
ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা শাখা- আমান। এতে রয়েছে কয়েকটি শক্তিশালী ইউনিট। যার মধ্যে অন্যতম হল ইউনিট ৮২০০। ইলেকট্রনিক নজরদারি, সাইবার গোয়েন্দা, তথ্য বিশ্লেষণ ও সাইবার যুদ্ধের জন্য এ্ই ইউনিট পরিচিত। এরাই ২০১০ সালে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় স্টাক্সনেট ভাইরাস হামলা চালায় বলে দাবি করা হয়।
এছাড়া ৯৯০০ নামের আরেকটি ইউনিটের রয়েছে, স্যাটেলাইট, ড্রোন ও ভিডিও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে। আধুনিক থ্রিডি মানচিত্র তৈরির মাধ্যমে সামরিক অভিযানে সহায়তা করে।
ইরানকেন্দ্রিক গোয়েন্দা গবেষণা ও হামলার প্রস্তুতির জন্য গঠিত হয়েছে ব্রাঞ্চ ৫৪। ২০২৩ সালে গঠিত এই ইউনিট মূলত পাসদারান-ই-ইনকিলাব বা ইরানি বিপ্লবী গার্ডকে লক্ষ্য করে কাজ করছে।
ইরানে সাম্প্রতিক হামলায় এসব ইউনিটের সমন্বিত পরিকল্পনা ও দক্ষতা নতুন করে বিশ্বকে ইঙ্গিত দিয়েছে যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইসরাইল তার গুপ্তচর বাহিনীকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করে চলেছে।