প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে 'ব্লু-ইকোনমির' সম্ভাবনা অন্বেষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী রোববার (৬ মার্চ) সকালে মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪১তম ব্যাচ ক্যাডেটদের 'মুজিববর্ষ' পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সমুদ্র সম্পদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে 'ব্লু- ইকোনমি' নীতিমালা ঘোষণা দিয়েছি এবং এই সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিকে যেন আরও গতিশীল করতে পারি, শক্তিশালী করতে পারি, মজবুত করতে পারি তারজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি যেমন সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে তেমনি এসডিজিও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। করোনার কারণে এই অগ্রগতি কিছুটা বাধার সম্মুখীন হলেও অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে এসডিজি-১৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
আমাদের বঙ্গোপসাগর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এখানে যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদ আমাদের আহরণ করতে হবে। এখানে যেমন মৎস সম্পদ আছে তেমনি অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদও আছে। সেগুলো আহরণ করে আমরা আরো আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারবো-এটাই আমি আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি, কাজেই এই মাছ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। যে সম্পদ আমাদের শুধু পুষ্টি জোগায় না এই সম্পদ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানী করেও আমারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। সেজন্য মৎস উৎপাদনের আমরা গবেষণা করে যাচ্ছি এবং অনেক সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু, সমুদ্র সম্পদ আহরণে আমাদের এখনো অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা সেটা করবো বলেই বিশ্বাস করি।
তিনি পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি চাইবো, তোমরা সবসময় সাহসের সাথে কাজ করবে এবং তোমাদের লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে আরো বেশি সহায়ক হবে বলে আমি বিশ^াস করি। আমি আশা করি, আমাদের সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তোমাদের ভূমিকা থাকবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। তোমরাই হবে আগামীর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কর্ণধার। প্রধানমন্ত্রী ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।
জাতির পিতার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’।
এ বছর একাডেমির ৪১তম ব্যাচে নটিক্যাল বিভাগে ৩৩ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩১ জন এবং মেরিন ফিশারিজ বিভাগে ২০ জন ক্যাডেটসহ সর্বমোট ৮৪ জন নারী ও পুরুষ ক্যাডেটের পাসিং আউট হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে রেকর্ড দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি: জাতিসংঘ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ একাডেমি হতে প্রশিক্ষিত হয়ে তোমরা গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় নাবিক হতে চলেছ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস-কঠোর অধ্যবসায়, কঠিন পরিশ্রম এবং প্রগাঢ় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত এই জ্ঞান তোমাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
আমাদের স্বাধীনতার যে আদর্শ, যে নীতি সেটা মেনে চলতেও ক্যাডেট আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে মেরিন ফিশারিজ একাডেমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত হয়েছে। চার বছর মেয়াদি বিএসসি (অনার্স) ইন নটিক্যাল স্টাডিজ, বিএসসি (অনার্স) ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিএসসি (অনার্স) ইন মেরিন ফিশারিজ ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ফলে, এ একাডেমি থেকে শিক্ষা সমাপনের পরে ক্যাডেটদের উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের পথ সুগম হয়েছে। একাডেমির জন্য আধুনিক সিমুলেটর (কৃত্রিমভাবে সমুদ্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যা অচিরেই একাডেমিতে সংযুক্ত হলে এ একাডেমি একটি আন্তর্জাতিক মানের মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত হবে।
সরকার প্রধান বলেন, সারা বিশ্বে যে সময়ে সমুদ্র আইন প্রণয়নের কোন সুনির্দিষ্ট মাত্রা ছিল না, তখনই ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা প্রথম বাংলাদেশের জন্য 'দি টেরিটেরিয়াল ওয়াটার্স এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪' প্রণয়ন করেন, যা বিশ্বের প্রথম সমুদ্র আইন হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন, '৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া মেরিন ফিশারিজ একাডেমির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রথম মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিকমানের মেরিটাইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে শুরু করে। এ সময়ে একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ, বিভিন্ন ল্যাবে সুবিধা বৃদ্ধি, সম্প্রসারিত লাইব্রেরি সুবিধা, আধুনিক প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ, পুরুষ ও মহিলা ক্যাডেট হোস্টেল এবং ভবিষ্যতে বিদেশি ক্যাডেট অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিদেশি ক্যাডেট হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে আধুনিক মানসম্মত সুইমিং পুল, অডিটোরিয়াম, ব্যায়ামাগার স্থাপনসহ ক্যাডেটদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সুবিধাদি সৃষ্টি করা হয়েছে।
এই একাডেমিতে ২০১০ সালে ৩২তম ব্যাচ হতে মহিলা ক্যাডেট ভর্তি শুরু হয় এবং এ যাবৎ সর্বমোট ৫৮ জন মহিলা ক্যাডেট উত্তীর্ণ হয়েছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা বাসস।
আরও পড়ুন: দুই পক্ষের গোলাগুলিতে বান্দরবানে নিহত চার
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ পদক বিতরণ করেন। এইচ এম বেনজীর আহমেদ সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী চৌকষ ক্যাডেট হিসেবে 'বেস্ট অলরাউন্ডার গোল্ড মেডেল' লাভ করেন।
মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মেরিন ফিসারিজ একডেমির কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
একাত্তর/আরবিএস