মোটা চালের দাম বাড়ার পেছনে মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, চতুর কিছু ব্যবসায়ী এরই মধ্যে চালের মজুত করেছে।
তিনি হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে যারা বাজার অস্থিতিশীল করছে তাদের কঠোর হাতে মোকাবিলা করবে সরকার।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ধান, গমসহ ৩৫টি নিত্যপণ্যের ভবিষ্যৎ চাহিদা ও যোগান নিরূপণে পরিচালিত গবেষণার চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
২০২১ সালে দেশে চালের চাহিদা ছিলো ৩ কোটি ৫২ লাখ মেট্রিক টন। তবে বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবার কিছুটা কমেছে চালের উৎপাদন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিল বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ চাহিদার তুলনায় কমবে চালের সরবরাহ। তাই খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চালের মজুত বাড়াতে হবে।
গবেষণা দলের প্রধান এস এম ফকরুল ইষরাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকিঁ মোকাবেলায় উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি জানান, মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ভাতের বদলে অন্যান্য ক্যালোরি গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। এ জন্য ২০৫০ সাল পযন্ত তেল জাতীয় ফসল, ডাল, আলু, সবজি ও ফলের মতো খাবার উদ্বৃত্ত থাকবে।
আবহাওয়া ও বৈশ্বিক নানা সঙ্কটের প্রভাবে চালের উৎপাদন কমা নিয়ে শঙ্কা জানান কৃষিমন্ত্রীও। তবে সঙ্কটটকে পুজি করে যারা বাজারে কারসাজির চেষ্টা করছে তাদের হুশিয়ার করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারের ঘাটতি নেই। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদার অতিরিক্ত মজুত রয়েছে। আগামী বোরো মৌসুমের জন্য সার সংগ্রহ করছি। তারপরও কিছু ডিলার ও অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, কিছু ব্যবসায়ী বেশ চতুর। তারা আমনের উৎপাদন কমবে জেনে ইতোমধ্যে চাল মজুত করছে। খরা আর অনাবৃষ্টিতে এবছর আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। গ্রামগঞ্জে অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। সেচ সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেরিতে লাগানো আমনের ক্ষেত এখন সেচের অভাবে ফেটে চৌচির। আমন নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছি বলে উদ্বেগ জানান কৃষিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, আগস্টের পরে ধান রোপণ করলে উৎপাদন কমে যাবে। আগামী ১৫ দিন আমনের সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী সেটি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে রাতে সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবহাওয়া বিভাগ বলছে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয়েছে এ বছর। শুধু বাংলাদেশে নয়, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে একই পরিস্থিতি। ফলে সেচ দিয়ে ধান করতে হচ্ছে। অনেক জায়গায় সেচের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হবে।
নিত্যপণ্যের দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা স্বীকার করছি মানুষ কষ্টে রয়েছে। যাদের আয় কম তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি সেটা সমাধান করার।
কীভাবে দ্রুত সব কিছুর দাম কমানো যায় সে চেষ্টা সরকারের রয়েছে। তবে, বিশ্ব পরিস্থিতি খুব খারাপ। সেজন্য বিশ্বজুড়েই এ অস্থিতিশীলতা বলেও মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী।