বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ‘গণহত্যার’ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিষয়ে ২৪ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (২০ এপ্রিল) প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেয়।
‘ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়’ (সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি) এর অভিযোগ আনা এ মামলায় রোববার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার দিন ছিলো।
তদন্ত শেষ পর্যায়ে জানিয়ে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে দুই মাস সময় চেয়েছেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আজ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলার শুনানি হয়। প্রথম মামলাটি ছিলো মানবতাবিরোধী অপরাধের। এ মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জন আসামি রয়েছেন, যারা এই অপরাধের নির্দেশদাতা ছিলেন। মামলার ১৭ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। আমরা আজ আদালতে এই মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে একটি রিপোর্ট দিয়েছি এবং দুই মাসের সময় চেয়েছি। আদালত আমাদের দুই মাস সময় দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি মামলার শুনানি হয়। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সম্পৃক্ততার বিষয়ে যে মামলাটি রয়েছে সেটির বিষয়ে আমরা আদালতকে জানিয়েছি, আমাদের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে। তারপরও আমরা সত্যতার জন্য দুই মাসের সময় চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
তৃতীয় যে মামলাটির শুনানি হয় সেটি হলো গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ক্রসফায়ার নিয়ে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, এই মামলাটিতে আমরা ১১ জনের বিরুদ্ধে শুরু করেছিলাম। মামলায় মাত্র একজন গ্রেপ্তার আছেন, তিনি হলেন সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসান। শতশত গুমের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তারপরও আমরা আদালতের কাছে তিন মাস সময় চেয়েছিলাম, আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। এই সময়ের মধ্যে গুমের অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত-প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এদিকে আদালতে আজ আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানকে হাতকড়া পরিয়ে তোলার সময় ওই নেতা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, আসলে এ বিষয়টি আমাদের এখতিয়ার না। আদালতে আসামিকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তোলা হবে কি না সেটা জেল অথরিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আসামিকে যদি কন্ট্রোল করতে না পারা যায় এবং তার পক্ষ থেকে যদি কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে তাহলে তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে বা আরও জটিল কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করে আদালতে তুলতে পারে জেল কর্তৃপক্ষ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা আদালতকে জানিয়েছেন, বিশেষ করে হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খান ও জিয়াউল হাসান তাদের নির্বংশ করার হুমকি দিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন। এছাড়া এদের মধ্যে একজন তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হেলমেটও ছুড়ে মেরেছেন। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে করে তাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালতে তুলেছে।