করোনা অতিমারীর পাশাপাশি ডেঙ্গুও বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলেছে। হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের মতে, করোনার মতো ডেঙ্গুও তার রূপ বদলাচ্ছে। দুই থেকে তিন বছর আগে ডেঙ্গুর যেমন লক্ষণ দেখা যেতো- ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জ্বর, র্যাশ আসা, ৪-৫ দিন পর প্লাটিলেট কমে যাওয়া সেরকম লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে না।
হঠাৎ করেই জ্বর বা সামান্য জ্বর। দুই-তিন দিনের মধ্যে প্লাটিলেট কমে যায়, রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। ডেঙ্গুর সঙ্গে পেটে কিংবা বুকে পানি, হার্টের সমস্যার মতো জটিলতা এবার বেশি হচ্ছে। আবার অনেকের করোনা এবং ডেঙ্গু হচ্ছে। ডেঙ্গুতে শিশুদের বেশি সমস্যা হচ্ছে।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৪০ জন মারা যান। এর মধ্যে জুলাই মাসে ১২ জন এবং ২৭ আগষ্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৬ দিনে ২৮ জন। গত ২৭ আগষ্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৩০৪ জন।
এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৮ হাজার ২৩০ জন। ২৭ আগষ্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১৬৯ জন এবং অন্যান্য জেলায় ১৫ জন ভর্তি হন।
এ নিয়ে ২৭ আগষ্ট রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯০৫ জন এবং অন্যান্য জেলায় মোট ১২৭ জন ভর্তি ছিল।
করোনা অতিমারীর মধ্যে এ বছরের জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে। জুলাইয়ে দুই হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়। আগষ্ট মাসের ২৭ তারিখ সকাল ৮টা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬৪৬ জন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলছে।
ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়কাল সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর। তবে জুন থেকে অক্টোবরে বর্ষার মৌসুমে ডেঙ্গুর মারাত্মক বিস্তার ঘটে। এ সময়ে জমে থাকা স্থির পানি ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজননের সঠিক পরিবেশ তৈরি করে দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের অন্যতম কারণ।
এডিস মশা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সর্বনিম্ন ৭ থেকে ১০ দিনে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে। পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এডিস মশার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারনা, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব স্থায়ী হবে। অতীতে ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এবছর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা না হলে আগামী বছরগুলোতে সারা দেশে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবছরই আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ বছরের আগস্ট মাসও তার ব্যতিক্রম নয়। আর যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট আবহাওয়ার তারতম্যের কারণেই এই শঙ্কা থাকে।
গত ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো প্রাণহানি হয়নি। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়ায়। ২০১৯ সালে এক লাখেরও বেশি মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সে বছর সরকারি হিসেবে মারা যান ১৭৯ জন।
শনিবার (২৮ আগষ্ট) সকালে, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাসফ-সহ ১৭ টি সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম জোরদার এবং গণ উদ্যোগ বৃদ্ধি করার দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন। এসময় অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তর/ এনএ