সেকশন

রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
 

ইশতেহার দেখে নতুন করে চিনতে হবে শেখ হাসিনাকে

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সচরাচর দায় স্বীকারের সংস্কৃতি নেই। যিনিই ক্ষমতায় থাকেন বা ক্ষমতার বাইরে থাকেন কাউকেই কখনো দায় স্বীকার করতে দেখা যায় না। এই যেমন দিনের পর দিন হরতাল অবরোধের নামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা কিংবা রেল লাইনের ফিসপ্লেট কেটে যাত্রীবাহী ট্রেন বড় দুর্ঘটনার মুখে ফেলা, অথবা ট্রেনে আগুন দিয়ে মা-শিশুসহ সাধারণ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।

এর একটি দায়ও কিন্তু সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বা  আন্দোলনকারী অন্য রাজনৈতিক দলের, যারা দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ ডেকে যাচ্ছেন তারা কখনই স্বীকার করেনি। সব সময় বলছে এগুলো সরকার করাচ্ছে।

এর বাইরেও যদি আমরা মোটা দাগে দেখি ১৫ই আগস্টের পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ও নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। সেসময়ের বিরোধী দলীয় নেতৃত্ব ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করে দেশকে রাজনীতিক শূন্য করতে চেয়েছিল সেসময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বর্বর ওই গ্রেনেড হামলার পরপরই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে।

নির্লজ্জের মত বলে ‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আওয়ামী লীগ নিজেরাই ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে’ শুধু তাই নয়, সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়া তো আরও এক ধাপ এগিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে সরাসরি আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘শেখ হাসিনা নিজের ভ্যানেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে সমাবেশে গেছেন’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রীতিমত তামাশা করেন খালেদা জিয়া।

এখানেও আমরা দেখি দায় স্বীকারের চেয়ে দায় চাপানোর সংস্কৃতিই শক্তিশালী। এর বাইরেও যদি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি, আমরা দেখবো, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে বার বার বিএনপির নাম এসেছে। বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের মত শীর্ষ জঙ্গি এবং জামাতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) মত জঙ্গি সংগঠন ছিলো সবচেয়ে বেশি আলোচনায়।

এসব জঙ্গিদের নিয়ে গণমাধ্যমে খবর আসলে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী জামায়াত নেতা নিজামী থেকে শুরু করে বিএনপির মন্ত্রীদের নাম এসেছে বারবার। কিন্তু কেউই জঙ্গিদের দায় স্বীকার তো দূরের কথা অস্তিত্ব আছে সেটাই স্বীকার করেনি। যদিও পরে নানামুখী চাপে অস্তিত্বের স্বীকার করলেও দায় স্বীকার করেনি।

এমন আরও বহু ঘটনা আছে যেগুলো উল্লেখ করলে এই লেখা শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখি আমরা আওয়ামী লীগ সভাত্রেী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেলায়। গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনা করছে।

দেশ পরিচালনায় এই সময়ে নানান ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে গেছে। দারিদ্র্য কমেছে। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা এখন শুধুই ইতিহাস। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে খাদ্যের নিরাপত্তা দেওয়া। কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়া, যোগাযোগ খাতের আমূল পরিবর্তন করে দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যোগাযোগ সহজ করে তোলা, বিশেষ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ২১ জেলাকে রাজধানীসহ সারাদেশের সঙ্গে যেমন যোগসূত্র তৈরি করে দিয়েছে তেমনি অর্থনীতিতেও রাখছে বিরাট ভূমিকা।

বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-এলঙ্গো মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করাসহ দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত ১৫ বছরে বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছে। রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে নেওয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।

যার অংশ হিসেবে এরইমধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দেশের মেট্রোরেল চালু হয়েছে। মেট্রোরেলের আরও পাঁচটি লাইন নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এর বাইরে ঢাকা-গাজীপুর বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন খুলে দেওয়ার অপেক্ষায়।

নির্মাণ করা হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। যা বিশ্বের বুকে নতুন এক পরিচয়ে পরিচিত করে তুলবে বাংলাদেশকে। এটি হবে আন্তর্জাতিক একটি হাব। দেশের প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেল। যমুনা নদীতে নির্মাণ হচ্ছে পৃথক রেল সেতু।

যোগাযোগ খাতে অন্যতম আলোচিত একটি কক্সবাজারকে রেল যুগে নিয়ে আসা। ঝিনুক আদলে নান্দনিক রেল স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ করে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে সরকার। যা দেশের পর্যটনখাতের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

আছে বিদ্যুৎ খাতের বিষয়টি। ২০০৮ সাল যেখানে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল মাত্র ২৯শ’ মেগাওয়াট, সেখানে এখন প্রতিদিন উৎপাদন ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। পাবনার রূপপুরে নির্মাণ হয়েছে দেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া রামপাল, মাতারবাড়ীতে নির্মাণ হয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পাশাপাশি মহেশখালিতে গভীর সমুদ্র নির্মাণের কাজও চলছে। সব মিলিয়ে গত ৩৫ বছরে দেশের যা উন্নয়ন ঘটেনি, সেটিই ঘটেছে  গত ১৫ বছরে। বছরের শুরুতে কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার মত বড় অর্জনও আছে সরকারের।

এর বিপরীতে যদি ব্যাংক খাত, শেয়ার মার্কেটের কথা বলি তাহলে বলবো, এসব খাত সরকারকে ভূগিয়েছে এবং ভোগাচ্ছে। তারপরও দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। নানা প্রতিকূলতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে এবং বৈশ্বিক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে সবুজ বাংলাদেশ।

২০০৮ সালে ‍রূপকল্প ২০২১ দিয়ে যে নবযাত্রা শুরু করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, সেই ধারবাহিকতায় ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। এবার এসে স্মার্ট বাংলাদেশ বাংলাদেশ গড়ার শ্লোগান দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। তাদের এবারের মূল শ্লোগান হচ্ছে ‘‘উন্নয়ন দৃশ্যমান-বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’’।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের নাগরিকদের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর করে তুলতে ‘স্মার্ট নাগরিক’ ‘স্মার্ট সরকার’ স্মার্ট অর্থনীতি’ ও স্মার্ট সমাজ’- এই চারটি মূল স্তম্ভের সমন্বয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

এই ইশতেহার তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন, বিগত ১৫ বছরে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে যা ভুলত্রুটি হয়েছে তার সব দায়ভার তার এবং তার সরকারের। আর সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি বাংলাদেশের জনগণকে। তিনি বলেন, আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবো।

ইশতেহারের শেষাংশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে্ বলেছেন, কাজ করতে গিয়ে কিছুটা ভুল হয়েছে। তার মানে আওয়ামী লীগ সভাপতি এখানে দায় অস্বীকার করেননি। করার চেষ্টাও করেননি। এত উন্নয়নের মহাযজ্ঞের পরেও তিনি বিশ্বাস করেন, একটি দল ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও কর্মকাণ্ডে কিছুটা ভুলভ্রান্তি থাকবে। কারণ আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নই। তাঁর এই দায় স্বীকার করে নেওয়ার মানসিকতা এখন দেশের সব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।

লেখক: সাংবাদিক।

 

এআর
গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন যে কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান হাতিয়ার। কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তারা জনগণের একেবারে কাছাকাছি যায়, নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করে এবং নেতৃত্ব বিচার করে। শুধু যেসব রাজনৈতিক দল...
বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এতোদিন আন্দোলন করে আসছিল। এখন কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়কে ইস্যু হিসেবে যুক্ত করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশে মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই স্বল্প সময়ে তিনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং...
রাষ্ট্রের নানা সমস্যা মাথায় নিয়েও যিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সকল প্রকার সুখ-দুঃখের খবর রাখেন; তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ...
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায় ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল এসিসটেন্ট (আইডিইএ)। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপরও জোর...
কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার কিছু সময় পর এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছিলো অখ্যাত সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন উপমহাদেশের এক অনন্যসাধারণ, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ।
ইরানের শহীদ রাজাই বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন অন্তত ৮০০ জন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
লোডিং...
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত