সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদকে অসত্য বলে দাবি করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। শনিবার ‘আমার কিছু কথা’ শিরোনামে এক ভিডিও বার্তায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেন।
শুরুতেই বেনজীর আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে যারা আমার সঙ্গে আছেন, আমাকে শুনছেন তাদের সবাইকে ঈদ উল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। আপনারা জানেন যে, আমি প্রায় দুই বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। এই অবসরকালীন সময় স্বেচ্ছাকৃতভাবে পাবলিক লাইফ থেকে দূরে নিরিবিলি জীবন যাপনের চেষ্টা করছি। চাকরিকালীন সময় ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী কর্তৃক ক্রমাগত অপপ্রচার এমনকি ব্যক্তিগত চরিত্রহননের অপচেষ্টার শিকার হয়েছি।
বেনজীর আহমেদ দাবি করেন, সম্প্রতি পত্রিকায় তাকে এবং তার পরিবারকে নিয়ে কিছু খুবই আপত্তিজনক ও মানহানিকর অসত্য ও বিকৃত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, দেশের মেইনস্ট্রিম প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই অসত্য ও মানহানিকর বিকৃত সংবাদ পরিবেশনে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। আমাদের মূল ধারার সেইসব প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বন্ধুগণের প্রতি আমি এবং আমার পরিবার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বেনজীর বলেন, আমার অবসর গ্রহণের প্রায় দুই বছর পর আকস্মিক আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি মানহানিকর, অসম্মানজকন, অসত্য সংবাদ কেনো পরিবেশিত হলো আমি সে আলোচনায় যাবোনা। তবে এর কারণ রাজধানীর সকল সাংবাদিক ও সচেতন মহলের মুখে মুখে।
আপনারা জানেন যে, বিগত ১৪ বছরে ঢাকা মহানগরীর পুলিশ কমিশনার হিসেবে এই মহানগরীর সকল সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ, সেই সঙ্গে সাবেক ডিজি র্যাব ও আইজিপি হিসেবে সমগ্র দেশবাসীকে সেবা প্রদানের দুর্লভ সুযোগ পেয়েছি। এই জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া এবং বাংলাদেশের সরকার প্রধান এবং সমগ্র জনগণের কাছে বিনয় অবনত চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
যেহেতু আমি পাবলিক এক্সচেকার হতে ব্যয়িত অর্থে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এরপর প্রায় ৩৫ বছর রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসবে কর্তব্য পালন করেছি, সেহেতু ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য এবং তথ্য তুলে ধরার একটি নৈতিক তাগিদ অনুভব করেছি।
তাছাড়া এদেশের মানুষ যারা আমাকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন, সমর্থন করেন। তারা সমেত আমার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, নিকট ও পরিচিতজন যারা এই অসত্য এবং বিকৃত সংবাদের প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগতভাবে আহত হতাশ এবং সংক্ষুব্ধ হয়েছেন তাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে প্রকৃত সত্য এবং তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে তাদেরকে আশ্বস্ত এবং তাদের বিশ্বাসের জায়গাটি সুদৃঢ় করার জন্য আমি এবং আমার পরিবার থেকে প্রকৃত সত্য এবং তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করি।
পুলিশের সাবেক এই আইজিপি বলেন, আমার বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পালটা আক্রমণ বা পাল্টা অভিযোগ কিংবা বিদ্বেষ তৈরি করা না। শুধুমাত্র নৈতিক এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে আমি আমার কথাগুলো বলছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রকাশিত দুই কিস্তি সংবাদ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করেছি। এতে মোটামুটি ৪৫টি তথ্য/অভিযোগ/অপমানজনক মন্তব্য সন্নিবেশিত আছে। তার মধ্যে ২৪টি তথ্য/অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কল্পনাপ্রসূত, দুইটি বিষয়কে ৭ বার পুনরাবৃত্তি করে পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুইটি তথ্যকে ভুল প্রেক্ষাপটে বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। বাকি ১০টি অভিযোগ বা তথ্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে শুধু তিলকে তাল নয়, তাল গাছের ঝাড় সহকারে তাল বানিয়ে ভুল এবং অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।
বেনজীর বলেন, আমি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ পদগুলোতে ১৪ বছর এবং সবমিলিয়ে ৩৫ বছর চাকরি করেছি। ১৯৯৬, ১৯৯৭ এবং ২০০১ ও ২০০২ সালে আমি যথাক্রমে বসনিয়া এবং কসোভোতে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্তব্য পালন করেছি। সরকার থেকে লিয়েন নিয়ে আমি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ঈর্ষণীয় বেতনে ২০০৯ ও ২০১০ সালে চাকরি করেছি।
আমি সরকারি চাকরিজীবী হলেও আমার স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সাংবিধানিক অধিকার আছে। আমার সরকারি চাকরি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ এবং ভূসম্পত্তি অর্জনে কোন বাধা নেই। এটি তাদের সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার।
আমাদের জন্মস্থান, গোপালগঞ্জে ২০১৪ সাল থেকে আমাদের পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ রয়েছে। সেসময় থেকে বিগত ১০ বছর ধরে ধীরে ধীরে কৃষিক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বেড়েছে। প্রথমে সেখানে আমার পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করে। সেই খামারের আয় থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়ে। পরে তারা মৎস্যখামারের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলজ, বনজ, ঔষধি ও মসলা জাতীয় বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বনায়ন তৈরি করে।
কৃষিক্ষেত্রে ব্যবসার জন্য শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগের দরকার হয় না। ওই প্রকল্পে যে পরিমাণ জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। সত্য এই যে, সেখানে যে পরিমাণ টাকার জমি কেনা হয়েছে, তার থেকে বেশি ব্যাংক এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ঋণ/লোন সংগৃহীত আছে। তাছাড়া এই জমির পরিমাণ এবং টাকার উৎস সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে সন্নিবেশিত আছে। আমার স্ত্রীর পরিবার সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিজনক মন্তব্য করা হয়েছে। তার পিতা বাংলাদেশ সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যারা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমার স্ত্রী বিগত ২৪ বছর ধরে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়ের বিপরীতে সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে আসছে।
প্রতিবেদন দু’টিতে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্পত্তি উল্লেখ আছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিবেদনে যেভাবে বলা হয়েছে- তা নয়। ঢাকার কাছে আমার বিঘার পর বিঘা জমি নেই। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির ওপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নেই, পূর্বাচলে সেই কথিত ডুপ্লেক্স বাড়ির পাশে একই জায়গায় আরও ১০ বিঘা জমি নেই। আমার ৩৫ বছরের চাকরি জীবনে বেতন-ভাতার যে কাল্পনিক হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে সেটিও ভুল ও অপমানজনক।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আমার অবসরের পর তথাকথিত থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে এবং সর্বসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে গোপন বা আড়াল করার কোন সুযোগ নেই। গোপালগঞ্জ প্রজেক্টে দুইটি কোম্পানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার একটি ২০ কোটি এবং আরেকটিতে ৫ কোটি অনুমোদিত মূলধনের কথা এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেন সাধারণ পাঠকদের মনে হবে যেন এই ২৫ কোটি টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে হয়েছে। অনুমোদিত মূলধন এবং পরিশোধিত মূলধন এক নয়।
এই দুই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন সব মিলিয়ে এমনকি ১ কোটি টাকার ধারে কাছেও নেই। সাভানা এগ্রোতে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে মর্মে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে, এই দুটি কোম্পানি এখন পর্যন্ত অর্থাভাবে ব্যবসাই শুরু করতে পারেনি। শতকোটি টাকা বিনিয়োগের প্রশ্ন আসে না। মূলত ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধির লক্ষে এই কোম্পানি দুটি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে করোনা প্রভাব ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ব্যাংক লোনের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে আমাদের পারিবারিক কোম্পানি যথাসময়ে ব্যাংক লোন সংগ্রহ করতে সফল হয়নি। এতে করে অর্থাভাবে কোম্পানি দুটি ব্যবসায় শুরু করতে পারেনি।
প্রকল্প এলাকার নাম বেনজীরের চক হিসেবে প্রতিবেদক দাবি করেছে। অনেক তথ্যের ন্যায় এটাও প্রতিবেদকের নিজস্ব আবিষ্কার। প্রকল্প এলাকায় মিটার ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে, এটাও মিথ্যা তথ্য। প্রকৃত সত্য এই যে, সেখানে বৈধভাবে আবেদন করে বৈদ্যুতিক মিটার নেওয়া হয়েছে এবং প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়।
এখানে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি ক্রয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা এবং তার সংসদীয় আসন সন্নিহিত। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কেনা একটি অসম্ভব কল্পনা।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের মগবাজার ইস্টার্ন প্রপার্টির একটি বহুতল ভবনে ৪০০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট আছে। এটিও একটি সর্বাংশে মিথ্যা তথ্য। মগবাজার কেনো, রমনা, সিদ্ধেশ্বরীর আশেপাশে আমাদের ফ্ল্যাট/এপার্টমেন্ট কিছুই নেই।
আনন্দ হাউজিং -এ ৪০ কাঠা জমিসহ ৪৫ কোটি টাকার বাড়ি আছে বলে দাবি করা হয়েছে। আনন্দ হাউজিং একটি সমবায় সমিতি। ২০০৭ সালে আমরা এখানে একটি প্লট বুকিং দেই এবং কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই টাকা পরিশোধ করি। সেখানে আমাদের ৪০ কাঠার কোন প্লট নেই। এটি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। আমাদের প্লটে ৫ ইঞ্চি দেয়ালের টিনের ছাদ বিশিষ্ট একটা দুই তলা ঘর রয়েছে। আনন্দ হাউজিং ২০২৪ সালেও নাগরিক সুবিধা এবং ভৌত অবকাঠামো তেমন গড়ে ওঠে নাই। সেখানে একটি ৫ ইঞ্চি দেয়াল বিশিষ্ট ২ তলা টিনের চালের ঘরের মূল্য ৪৫ কোটি দাবি করা হাস্যকর।
আমি আইজি থাকা অবস্থায় পূর্বাচলে ফারুক মার্কেটের পেছনে ১০ কাঠার একটি প্লট ক্রয় করেছি যার বাজার মূল্য ২২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আমি আইজিপি হিসেবে/র্যাব ডিজি থাকাকালীন কোন প্লট কিনিনি। ২০০১ সালে রাজউক বরাবর আবেদন করে আমি একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত হয়। নিজের এবং পারিবারিক অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় আমি প্লটটি বিক্রি করেছি। পূর্বাচলে বর্তমানে আমাদের কোন প্লট/বাড়ি কিছুই নেই। এটিও একটি মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য।
রূপগঞ্জের নাওরায় আমাদের একটি ২ বিঘা জমি রয়েছে, যার বাজার মূল্য ২০ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটিও মিথ্যা তথ্য। রূপগঞ্জে আমাদের কোন জমি নেই। মেয়ের বিশ্রামের জন্য বসুন্ধরায় ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছি অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের শেষদিকে আমরা বসুন্ধরা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণ অসম্পূর্ণ একটি ফ্ল্যাট কিনি, পরে বিভিন্ন কারণে সেটি বসবাস উপযোগী প্রতীয়মান না হওয়ায় আমরা সেটি বিক্রি করে দেই। বসুন্ধরা এলাকায় এখনও ২০২৪ সালে ১০ হাজার টাকা স্কয়ার ফিট কোনো এপার্টমেন্ট বিক্রি হয় না, ২০১৩ সালে তো প্রশ্নই আসে না। সেখানে দরজার দাম ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে দারোয়ানের রেফারেন্সে। বিষয়টি খুব মজার এবং কৌতূহল পূর্ণ, দারোয়ান কীভাবে দরজার দাম জানবে! একটি দরজায় ২১ থেকে ৩০ ফিট কাঠ থাকতে পারে, সেখানে দরজার দাম ৫০ লাখ হলে, প্রতি স্কয়ার ফিট কাঠের দাম আসে পৌনে ২ লাখ টাকা। এত দামি কোন কাঠ আছে কিনা আমার জানা নেই।
আমাদের পরিবারের স্টক মার্কেটে বিজনেস পোর্টফলিও এবং শেয়ার কেনাবেচার ব্যবসা আছে। এগুলোর বিপরিতে লা মেরিডিয়ানে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ লাখ শেয়ার রয়েছে। লা মেরিডিয়ানের মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৫ কোটি ৫০ লাখ। সেখানে আমাদের পরিবারের হাতে থাকা শেয়ার ১ শতাংশেরও অনেক নিচে।
ভাওয়াল রিসোর্ট, বনানীতে ইউনিক রিজেন্সি হোটেল, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন এবং হোটেল রামাদায় আমাদের মালিকানা আছে মর্মে দাবি করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোন মালিকানা/বিনিয়োগ কিছুই নেই।
এছাড়া পদ্মা ব্যাংক এবং ক্যানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা মালিকানা কিনেছি মর্মে দাবি করা হয়েছে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোন মালিকানা/ বিনিয়োগ নেই। এমনকি পদ্মা ব্যাংকে মালিকানা তো দূরের কথা একটা অ্যাকাউন্টও নেই আমার।
দুবাইতে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা, সিঙ্গাপুরে অর্ধশত কোটি টাকার সোনার ব্যবসা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছি মর্মে দাবি করা হয়েছে। দুবাইতে আমাদের শতকোটি টাকার কোনো হোটেল ব্যবসা নেই। সিঙ্গাপুরে অর্ধ শতকোটি টাকার কোন সোনার ব্যবসা নেই। থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়াতে আমাদের কোন জমি নেই। দুবাই এর কেন্দ্রস্থল কনকর্ড হোটেলে মোটা অংকের শেয়ার রয়েছে মর্মে দাবি করা হয়েছে। উল্লেখিত হোটেলে আমাদের কোন শেয়ার নেই। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি সেখানে কোন শেয়ার হোল্ডার নেই। মূলত এটি একটি একক মালিকানাধীন হোটেল। এবং একজন স্থানীয় আমিরাতি এই হোটেলের মালিক।
সিঙ্গাপুরে নিজি জুয়েলার্সে আমার মালিকানা আছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এই নামে কোন জুয়েলার্স আছে কিনা সেটাও জানিনা, কখনো যাইনি, চিনিও না, বিনিয়োগ/মালিকানার প্রশ্নই আসে না।
সোনালী ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত সোনালী ব্যাংক এবং অন্যান্য উৎস থেকে লোন নিয়ে আমাদের গোপালগঞ্জের পারিবারিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন এলাকায় নারকেল বাগান দখল এবং জমি থাকার কথা বারবার ঘুরিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দাগ এবং খতিয়ান নাম্বার উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো যোগ করলে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬৪.৩৯ শতাংশ। অথচ একই জায়গায় দাবি করা হয়েছে আমাদের ৪১৮ শতাংশ জমি রয়েছে। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে এসকল তথ্য ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর।
জনৈক অজিউল্লাহ -এর নারকেল বাগান দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। সেখানে কোন নারকেল বাগান আছে কিনা আমার জানা নেই, এই নামে কোন ব্যক্তি আছে কিনা সেটিও আমি জানি না। প্রকৃত সত্য এই যে, আজ থেকে ১৭ বছর আগে আমরা পাথুরে এবং বালুময় একটা প্লট ক্রয় করি এবং সেটা এখনো সেভাবে পড়ে আছে, অন্য করাও জমি দখলের প্রশ্নই আসে না।
শেষকথা, আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্পত্তি আছে, তার প্রত্যেকটির বিপরীতে অর্থের উৎসসহ সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে যথাযথভাবে উল্লেখ করা আছে। আমার পরিবার তাদের ব্যবসার জন্য এবং আমি নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করি। সে কারণে আমি এন বি আর কর্তৃক সেরা করদাতার সম্মাননার স্মারকে ভূষিত হয়েছি। আমার চাকরি জীবনে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘুষ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। পুলিশ কমিশনার এবং র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষে কাঠামোগত প্রশাসনিক এবং অপারেশনাল সংস্কার বা রিফর্ম -এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আইজিপি হিসেবে আমার স্বল্প মেয়াদে কর্তব্যকালীন সময় আমি কনস্টবল, সাব ইনস্পেক্টর, এবং সার্জেন্ট নিয়োগের বিধিমালা ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে খোলনলচে পালটে দিয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির পথ বন্ধ করে দিয়েছি। ফলে এখন মাত্র ১২০ টাকা গভমেন্ট প্রসেসিং ফি দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগ্য এবং মেধাবীরা নিয়োগ পাচ্ছে। জুনিয়র পদ সমূহে পদোন্নতিতে যে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, সেখানেও পদোন্নতি বিধিমালা ব্যাপক সংস্কার করে দুর্নীতিমুক্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছি। যার সুফল এখন জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা পাচ্ছে। এ কারণে আমি সরকার কর্তৃক শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি।
পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক বলেন, আমার পুরো ক্যারিয়ারে আমি পুলিশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, আমার অবসরের পর আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের অপচেষ্টা অত্যন্ত হতাশা এবং দুঃখজনক। এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর যারা এক প্রকার পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত ছিলেন তাদের জন্য বলছি, প্রতিবেদনে আমার এবং আমার পরিবারের যেসকল সম্পত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেগুলোর মালিক আমি ও আমার পরিবার নই বলে এখন আপনাদের জানিয়েছি, প্রতিবেদকসহ তারা সবাই যদি সেইসকল সম্পত্তির মালিক আমি ও আমার পরিবার মর্মে কোন দালিলিক কোন প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমরা সেসকল সম্পত্তি তাকে বা তাদেরকে বিনা পয়সায় দিয়ে দেব।
এর আগে শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফাইড পেজ থেকে সাবেক এই পুলিশ প্রধান জানান, শনিবার তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করবেন।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৩৭তম পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।
সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের সম্পদের তথ্য ও বিবরণী তুলে ধরা হয়।