সংসদে উত্থাপিত গণমাধ্যম কর্মী আইনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই আইন করছে সংসদের সদস্যরা, যারা নির্বাচিত হয়নি। যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা আইন তৈরি করবে গণমাধ্যমের জন্য। সেটার কি অবস্থা দাঁড়াবে আমরা জানি। আর এখানে কথা বলার কোনো স্বাধীনতা তো নেই-ই, কথা বললে শিরচ্ছেদও হতে পারে, এ রকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর কারামুক্তি উপলক্ষে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন হচ্ছে উপাত্ত সংরক্ষণ আইন। ৩৪ পৃষ্ঠার খসড়া দিয়েছে। কিছু দিন আগে দিলো সোশ্যাল মিডিয়া কন্ট্রোল করবে তারা। বক্তব্যগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং প্রয়োজন হলে উড়িয়ে দিতে পারবে।
সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার নতুন কোনো ঘটনা নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা সব সময় সত্য কথা বলা বা লেখা মানুষদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের নির্যাতন করেন, কারাগারে নিক্ষেপ করেন। অনেক সময় তাদের গুম করেন বা মেরে ফেলেন। সাগর-রুনির মতো সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকারীদের এখনও খুঁজে বের করতে পারেনি।
ফখরুল আরও বলেন, যুদ্ধ যখন হয়, সংগ্রাম যখন হয় তখন দালাল থাকে। বিভিন্ন রকমের মানুষ থাকে যারা ফায়দা নিতে চায়। এগুলো কাটিয়ে আমাদের ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। সেটা হতে হবে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য। সেই ঐক্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আমরা মুক্ত করবো। আমরা লেখার স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো। এটা আমাদের দায়িত্ব, এই দেশকে মুক্ত করা, গণতন্ত্রকে মুক্ত করা, স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনা।
ন্যায্যমূল্যের কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, জোর গলায় বলা হচ্ছে, ১ কোটি কার্ড দেওয়া হয়েছে গরিব মানুষদের। পত্রিকাতেও এসেছে, আমার ঠাকুরগাঁওয়ে যাকে কার্ড দিয়েছে তিনি হলেন আওয়ামী লীগের মহিলা দলের সভানেত্রী। তার দোতলা বাড়ি। পাশেই একজন দুস্থ, গরিব মানুষ যার টিনের চালাও নেই—সে কোনো কার্ড পায় না। এই অবস্থা দেশের।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খুব জোর গলায় বলা হচ্ছে, গরিব এক কোটি মানুষদের এক কোটি কার্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ আজকে পত্রিকায় দেখতে পারবেন, আমার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁয়ে একজনকে কার্ড দিয়েছে- যিনি হচ্ছেন জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী। তার দোতালা বাড়ি আছে। অথচ তার পাশেই গরিব মানুষ, যার ঘরে ভাতের চাল নেই। থাকার জন্য ঘরও নেই। সে কোনো কার্ড পায়নি। এটা কেবল ঠাকুরগাঁয়ে না, এই অবস্থা গোটা দেশের।
স্বাধীনতা কনসার্টের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। তারা ইসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছেন। কারণ নিত্যপণ্যের দাম এতো বৃদ্ধি পাচ্ছে যে- চাল, ডাল কেনার টাকা তাদের কাছে নেই। সেই সময় আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে শিল্পী এনে কনসার্টে নিজে গিয়ে গান শুনছেন। যেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তারা টরেন্টো ফ্লাইটে করে বাইরে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে এখন এমন একটা অবস্থা চলছে; এত খারাপ অবস্থা কখনো দেখিনি। কোনো রকমের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যূনতম স্বাধীনতা, একজনের সঙ্গে আরেক জনের সৌজন্য নিয়ে কথা বলা- এর কোনোটাই এখন আর নেই। থাকবেই-বা কী করে? চাকর যদি মালিক বনে যায়, তখন তো পরিস্থিতি এই অবস্থাতেই দাঁড়াবে। আজকে দেশে সেই অবস্থা হয়েছে। এমন সব কথা এমন মানুষ বলছে, যাদের জীবন চলে জনগণের টাকায়। যাদের বেতন হয় জনগণের টাকায়। আর তারা কি-না সব কিছুর মালিক হয়ে ক্ষমতায় বসে আছে।