ঢাকায় নিযুক্ত ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বৈঠক করেছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়লেও সত্যতা উড়িয়ে দিয়েছেন ফখরুল। এমনকি আমেরিকান দূতাবাসের সঙ্গে বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়ে গণমাধ্যমগুলো যোগাযোগ করলে তারাও সরাসরি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছে। ফলে এনিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, যখন ঢাকায় আমেরিকার পক্ষ থেকে প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে কেবল বৈঠক শেষ করেছে সে সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এই গোপন বৈঠক নিয়ে অস্বীকারের খেলা কেন খেলছে বিএনপি?
আলোচনার শুরু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সেদিন দুপুরে বারিধারায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠকটি হয়েছে বলে খবর আসতে থাকে। গণমাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে ফখরুল ইসলামের সঙ্গে সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
যদিও বিএনপির একাধিক রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পিটার হাসের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ছাড়া অন্য কেউ অবহিত নয়।
তবে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে, পিটার হাস ও মির্জা ফখরুলের বৈঠকটি আমেরিকান ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ফখরুল ইসলাম বেলা ১২টা ৫০ থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটাস হাস ও মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর আর্থরো হিনস ক্লাবে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ফখরুল ইসলামকে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) আবারও জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এটার উত্তর দেব না। কালকে (বৃহস্পতিবার) দিয়ে দিয়েছি (উত্তর)। আমি আপনাদের একটাই অনুরোধ করব সব সময়, আমরা সবাই তো এ দেশের মানুষ। আমাদের প্রত্যেকেরই এই দেশের প্রতি, মাটির প্রতি, মানুষের প্রতি দায়িত্ব আছে। আপনারা সাংবাদিক, স্বাভাবিকভাবেই স্কুপ নিউজ খুঁজবেন। বাট এট দ্য সেম টাইম সেই বিষয়টাকে আমরা ডাইভার্ট করব না, যা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই এই সময় পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিষয়েই জানানো দরকার বলে মনে করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, একটা দেশের রাষ্ট্রদূত এবং সেই দেশটি আমেরিকা, যখন বিএনপির মতো একটি দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তখন সেখানে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে এটাই স্বাভাবিক। এখন একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, আরেকদিকে তাদের পর্যবেক্ষকরা দেশে এসে নানা দলের সঙ্গে গোষ্ঠীর সঙ্গে সভা করছে। সে সময় আলাদা করে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে পিটার হাসের কী আলাপ?
এমনকি একই দিনে সুইস রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যখন বিএনপি প্রতিনিধি দল দেখা করছেন তখন হাসের সঙ্গে কেনো কেবল ফখরুল গেলেন সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দুপুরে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলির সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজ করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
রাজধানীর বারিধারায় রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ এবং বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল এতে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে তারা রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। এ সময় তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।
তারা রাষ্ট্রদূতকে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ছাড়াও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় চলমান এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে অবহিত করা হয়।
এদিকে, বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত একাধিক দলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সঙ্গে এই বৈঠক নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। যদি ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষাৎ করেনও জোট নেতাদের সাথে পরামর্শ ছাড়া এককভাবে কোনো বড় সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।
ফলে আলোচনা হলে জোটের নেতারা জানবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের এক বাম নেতা বলেন, খবরটি বৃহস্পতিবার আমরা যখন শুনেছি তখন অলরেডি গণমাধ্যম জেনে গেছে। কেন ফখরুল ইসলাম বৈঠকের কথা অস্বীকার করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটো কারণ হতে পারে। এক কূটনৈতিক শিষ্টাচারজনিত কোনো বিশেষ কারণে বৈঠকের খবরটিকে সামনে আনতে চাইছে না বিএনপি। আরেকটি বিষয়ে হলো, কী আলাপ হয়েছে তিনি তা এখনই বলতে চান না।