দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও জাতীয় পার্টির সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদের দুটি বক্তব্যের পর এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
অবশ্য আওয়ামী লীগ যখন দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে তখন দুটি আসনে তারা কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। তারমধ্যে একটি ছিলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। যেখানে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমান।
এবার দেশে নির্বাচনী হাওয়ার বইতে শুরু করার পর থেকে জাতীয় পার্টি ভোটে যাবে কিনা তা নিয়ে সরাসরি কিছু বলছিলো না। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করার সময়ও নির্বাচনের পরিবেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলো সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের দল।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৌশলগত জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালে আমরা নির্বাচন করেছিলাম। গতবার তারা আমাদের কৌশলগত জোট ছিলো এবং সেটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্য আসার কিছু পরেই, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় বৈঠকে বসে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এর আগে সোমবার রাতে জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের।
সেখানে আমু এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে শরিকদের আসন ভাগাভাগির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মঙ্গলবার আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন জোটগতভাবে হবে। বুধবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ।
জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে রোববার জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রাজধানীর বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন সাবালক হয়েছি। কারও সঙ্গে আলোচনা, দর-কষাকষিতে আমরা এখন নাই।
তিনি বলেন, আমরা এখন নিজের শক্তিতেই নির্বাচন করতে চাই। কোনো, কারও সঙ্গে সমঝোতা বা এসব যোগাযোগ আমাদের হয় নাই। আমাদের ইচ্ছাও নাই।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে নাটকীয়তার জন্ম দেওয়া জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচনের এই জোয়ার থেকে ছিটকে গেছেন। দলীয় চেয়ারম্যান দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে এবার দলের মনোনয়ন ফরম নেননি তিনি। নির্বাচন না করার ঘোষণাও দিয়েছেন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টিসহ আরো কয়েকটি দল নিয়ে গঠন করা হয় মহাজোট। ওই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে মহাজোট।
এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না করেই নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি। ওই ভোটে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে, এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ।
এসব আসনেই জয় পায় দলটি। ভোটের পর সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। আবার সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও থাকেন দলটির কয়েকজন। দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।
আবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে না থাকলেও ভোটে আসন ভাগাভাগি করে। গত সংসদ নির্বাচনের তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে। এই সংসদেও বিরোধীদলের আসনে রয়েছে জাতীয় পার্টি।