প্লট জালিয়াতির মামলার শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এরমধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দুর্নীতির মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন হাসিনা পরিবারের সদস্যরা। ছটি মামলায় আসামী করা হয়েছে শেখ হাসিনা, রেহানা ও তাদের সন্তানসহ ২৩ জনকে।
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে রাজউকের প্রতিটি ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো করেছে দুদক। ছয়টি মামলার মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছেলে জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলছেন, আইনের সব বিধান মেনেই তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এবার তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। সোমবার এসব অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। শিগগিরই সেগুলো আদালতে দাখিল করা হবে।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হাসিনা পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য আসে দুদকে। অভিযোগ উঠে ক্ষমতার অপব্যবহার রাজধানীতে প্লট থাকার তথ্য গোপন রেখে পুর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠার ছটি প্লট নেন শেখ হাসিনা পরিবার।
অনুসন্ধান শেষে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিকী, আজমিনা সিদ্দিকী ও টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ছটি মামলা করে দুদক। দুই মাসেরও কম সময়ে এবার মামলাগুলোর চার্জশীট দিলো দুদক। শেখ হাসিনা ও রেহানাসহ তাদের পরিবারের ৭ সদস্য এবং গনপুর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ব্রিটিশ এমপি হবার কারনে, নিজের নামে নিয়ে বোন আজমিনা সিদ্দিকীর নামে প্লটের বরাদ্দ নিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকী। এক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্রের আশ্রয় নিয়ে বোন আজমিনাকে প্লট পাইয়ে দিতে সহায়তা করেন টিউলিপ। এ কারনে তাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাসহ আসামি মোট আটজন। জয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার মাসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকায় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তায় প্লট নিজের ও ছেলে নাম বরাদ্দ নিয়েছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ‘অনিয়মের’ তথ্য পাওয়ার পর মামলা করেছে সংস্থাটি। প্লট জালিয়াতি ছাড়াও, হাসিনাপুত্র জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার ও বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে-মেয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ০১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর। শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ হয়েছে।