সাভারের বিকেএসপিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) ক্রিকেটে মোহামেডান-শাইনপুকুর ম্যাচ। যথাসময়ে সকাল নয়’টায় ম্যাচের টস করতে মোহামেডানের অধিনায়ক তামিম ও শাইনপুকুরের অধিনায়ক রায়ান রাফসানকে ডেকে নেন ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল। সব কিছুই স্বাভাবিক ছিলো। টসও হলো।
তবে তামিম কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন টসের আগে ওয়ার্ম আপের সময়ই। টস করে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর সেটা আরও বাড়ে। মোহামেডান কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে এ সময় তামিমকে মাঠে নামকে বারণ করে বিশ্রাম নেয়ার কথা বলেন। তরিকুল তামিমকে বলেন, সম্ভবত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর তামিম আরও অসুস্থ বোধ করেন। তরিকুলকে জানান, তাঁর খারাপ লাগছে, মুখের দিকে ব্যথা হচ্ছে। এরপর তামিম ও দলের অন্যান্যরা মিলে দ্রুত তামিমকে বিকেএসপির কাছের কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এ সময় বিকেএসপির চিকিৎসকও তাঁদের সাহায্য করেন।
তামিম নিজের গাড়িতে চড়েই হাসপাতালে যান। তার আগে সকাল ৯টা ২২ মিনিটে মোহামেডানের ফিজিও এনাম ম্যাচ রেফারি দেবব্রতকে ফোন করে জানান, বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টায় তামিমকে ছাড়াই খেলতে নামে মোহামেডান।
হাসপাতালে যাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ইসিজিসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরাক্ষা করা হয়। সেসবের রিপোর্ট দেখে তখনো পরিষ্কার হওয়া যায়নি তাঁর আসলে কী হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকায় যোগাযোগ করে তামিমের জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উড়িয়ে আনা হয় বিকেএসপির মাঠে। চলছিলো ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি।
কেপিজে হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে কিছু ধরা না পড়ায় তামিম ইকবালও তখন ভেবেছিলেন, ঢাকায় গিয়েই ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন। সঙ্গে থাকা মোহামেডান কর্মকর্তাদের সেরকম ইচ্ছার কথাই জানান তামিম। হাসপাতাল থেকে বিকেএসপিতে ফিরে হেলিকপ্টারে ওঠার আগেই জ্ঞান হারান তামিম।
কাছ থেকে সব কিছু দেখা ম্যাচ রেফারি দেব্রবত পাল জানান, তখন তাঁর মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিলো। পালস পাওয়া যাচ্ছিলো না। আকস্মিক এই পরিস্থিতিতে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউ।
বিকেএসপির চিকিৎসক তখন বলেন, অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিতে নিতে সমস্যা বাড়তে পারে। তার চেয়ে কাছের হাসপাতালে নেওয়া ভালো। ওদিকে তামিমের এই শারীরিক অবস্থায় হেলিকপ্টারের চালকও তাঁকে নিয়ে ওড়াটা ঠিক হবে না বলে জানান।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তামিমকে আবার কেপিজেতে নেয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে পুরো সময়টাই তাঁর বুকে পাঞ্চ করতে থাকেন মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী। তামিমের অবস্থা তখন অনেকটাই সংকটাপন্ন ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। কারও কোনো ডাকেই সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি।
হাসপাতালে আনার পর প্রথমে তামিমকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। এর মধ্যে তামিমের পরিবারের সদস্যরাও চলে আসেন হাসপাতালে। কেপিজে হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে তাঁর অ্যানজিওগ্রাম, অ্যানজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট করানো হয়।
অ্যানজিওগ্রামে তামিমের হৃদযন্ত্রে একটি ব্লক ধরা পড়লে, তখনই তাঁকে রিং (স্টেন্ট) পরানো হয়। আপাতত কেপিজে হাসপাতালের সিসিইউতে আছেন তামিম। সঙ্গে আছেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। জ্ঞান ফেরার পর তিনি পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন।
এদিকে, তামিমের পেজ থেকেও এডমিনের বরাতে একটি পোস্টে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়, ‘সকালে টসের পর হালকা বুকে ব্যথা অনুভব করলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় বিষয়টি দ্রুত দলের ফিজিও ও ট্রেইনারকে জানান। প্রাথমিকভাবে গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা মনে হওয়ায় তিনি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ গ্রহণ করেন।
তবে কিছুক্ষণ পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সতর্কতার অংশ হিসেবে নিকটতম হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসা শেষে তিনি বিকেএসপিতে ফিরে আসেন। এরপর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়।
মোহামেডানের ম্যানেজার শিপন ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া সম্ভব হয়। তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হলে তাকে আবারও কাছের কেপিজে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত এনজিওগ্রাম করা হয় এবং রিং পরানো হয়। বর্তমানে তিনি কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (CCU) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তার সুস্থতার জন্য সবার দোয়া কামনা করা হচ্ছে, যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।