চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছে চেম্বার আদালত। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এর ফলে কারামুক্তিতে বাধা থাকলো না।
বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত এ আদেশ দেন।
বাবুলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, জামিন বহাল থাকায় বাবুল আক্তার আজই কারামুক্ত হচ্ছেন।
এর আগে ২৭ নভেম্বর (বুধবার) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবুলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
তার আগে ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন নাকচ হয়েছিল।
২০১৬ সালের পাঁচ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে নিজের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে কয়েক দিনের মাথায় মামলার তদন্তে নতুন মোড় নেয়। এক পর্যায়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার শ্বশুর মোশারফ হোসেন।
পরে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাত জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার। বাকিরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেশামুল হক প্রকাশ, হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।
তদন্তে প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, স্ত্রীকে খুনের জন্য বাবুল আক্তার তিন লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করেন। এতে নেতৃত্ব দেন তার সোর্স মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সঙ্গে ছিল এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।
পিবিআই কর্মকর্তারা বলেন, বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে হত্যায় নিজের সোর্স মুসাকে নিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ভাড়াটে খুনি নিয়োগে মূল অর্থ যোগানদাতাও ছিলেন বাবুল নিজেই। কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনকালে বিদেশি এনজিও কর্মী গায়ত্রী অমর শিং এর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান বাবুল। এ নিয়ে বিরোধের জেরে স্ত্রী মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
আলোচিত এই হত্যা মামলা নিয়ে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বাবুল আক্তারকে পুলিশ সুপারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন বলা হলেও তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছিলেন। পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর তিনি প্রথমে কিছু দিন রাজধানীর আদ্বদীন হাসপাতালে চাকরি করেন। এরপর ব্যবসা করছেন বলেও শোনা যায়।
গত বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য দেন।এর আগে ২০২২ সালের চার জুলাই নেওয়া হয় সন্তানদের জবানবন্দিও।