এলাকার ৪৭ জন যুবক মিলে চালু করা একটি স্পোর্টিং ক্লাবের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন সোহেল মিয়া। করোনাকালে সেই সংগঠনের সদস্য কমতে কমতে আসে ১৬ জনে। এরই মধ্যে বেশি কিছু টাকা খরচ করে ফেলেন সোহেল। বিপত্তি বাঁধে তখন, যখন তার কাছে হিসাব চাওয়া হয়। পরে শেষমেশ কোনো উপায় না দেখে ভারতীয় অপরাধ বিষয়ক টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে সাজান অপহরণ নাটক। তাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে পরিবারের কাছে টাকা দাবি করলে পরে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।
ঘটনাটি নেত্রকোনার দুর্গাপুরের। রোববার (৩ অক্টোবর) ভোরে ময়মনসিংহের স্টেশন রোড থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
সোহেল উপজেলার সদর ইউনিয়নের গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে।
সোহেলের বাবা ইদ্রিস আলী জানান, গত শনিবার (২ অক্টোবর) তার কাছে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। ওই ফোনে ছেলেকে অপহরণের কথা বলে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ছেলের কান্নাকাটি আর আর্তনাদে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে ২৫ হাজার ব্যবস্থা করো।
এই দিকে স্থানীয়দের পরামর্শে ছেলেকে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ইদ্রিস আলী।
অভিযোগ পাওয়ার পরপরই সোহেলের খোঁজে মাঠে নামেন পুলিশ। রোববার ভোরে দুর্গাপুর থানার এসআই সাদেকুর জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে পুলিশের ছয় সদস্যের একটি দল ময়মনসিংহের স্টেশন রোড থেকে সোহেলকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতে অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন বলে স্বীকার করেন সোহেল। পরে বিকেলে দুর্গাপুরে আনার পর মুচলেকা রেখে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নিজের ভুল স্বীকার করে সোহেল মিয়া একাত্তরকে জানান, টাকা পাওয়ার কোনো উৎস না দেখে ভারতীয় সিরিয়াল দেখে নিজেকে নিজেই অপহরণের ঘটনা সাজিয়ে পরিবার থেকে টাকা নেওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলাম। গত দুইদিন আগে গাজীপুরে এক চাচার বাসায় কাউকে না জানিয়ে আত্মগোপনে গিয়ে নতুন একটা সিম কিনে পরিবারকে অপহরণের কথা জানিয়ে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এর আগেই পুলিশ আমাকে ধরে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: দিনমজুর থেকে কবিরাজ, দিচ্ছেন স্বপ্নে পাওয়া ফুঁ পানিপরা
সোহেলের পিতা ইদ্রিস আলী একাত্তরকে জানান, পুলিশ আজকে আমার ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর জানতে পারি কেউ তাকে অপহরণ করে নাই। সে নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রেখে অপহরণের নাটক সাজিয়েছে। বিষয়টি শোনার পর আমি আমার অভিযোগ তুলে নেই এবং ছেলেকে নিজ জিম্মায় নিয়ে আসি।
দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক সাদিকুর জামান ভূঁইয়া একাত্তরকে জানান, তাকে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন তাকে কেউ অপহরণ করেনি। তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে দিয়েই অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন।
একাত্তর/এসি