কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখা ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনা হবে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, ইকবাল হোসেনকে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাত ১০টায় গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় আনা হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ঘটনায় ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যকে সরবরাহ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মসজিদ থেকে কীভাবে পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে পূজামণ্ডপে প্রবেশ করে এবং গদা হাতে নিয়ে মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সাতজন নিহত
সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, গত ১৩ অক্টোবর ইকবাল হোসেন নানুয়া দিঘির পাড়ের কাছে দারোগা বাড়ি মসজিদ ও মাজার থেকে একটি কোরআন শরীফ সংগ্রহ করে এবং সেটি রেখে আসার পর তার হাতে হনুমানের গদা দেখতে পাওয়া যায়। মাজার এলাকার ফুটেজ ও দিঘির পাড়ের একটি বাড়ির ফুটেজ দেখে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এছাড়া পরদিন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সেখানেও উত্তেজিত জনতার সাথে সিসিটিভির একটি ভিডিও ক্লিপে তাকে দেখা গেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে আরও দেখা যায়, দারোগা বাড়ি মাজারের খেদমতকারী ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ূন নামে দুইজন দারোগা বাড়ি মসজিদে প্রবেশ করেন রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে। পরে ১০টা ৫৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করে ইকবাল। রাত ২টা ১৮ মিনিটে সে কোরআন শরীফটি সংগ্রহ করে। এরপর দারোগা বাড়ি মসজিদের উত্তরপাড়ের দিক দিয়ে একটি কোরআন শরীফ নিয়ে উত্তর দিকে (ইউসুফ স্কুলের দিকে নানুয়া দিঘির সড়ক দিয়ে) যায়।
পরে কোরআন শরীফ হাতে সে দিগাম্বরীতলা জগন্নাথ মন্দিরের সামনে দিয়ে কাপড়িয়া পট্টি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পাড় হয়ে চকবাজার কাসারিপট্টি পূবালী ব্যাংকের পাশের গলির বিদ্যুৎ অফিসের সামনে যায়। সেখান থেকে মোড়ে এসে দাঁড়ায়। এসময় নৈশপ্রহরীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে।
আবার একই রাস্তায় সে নানুয়া দিঘির পাড়ে আসে। রাত তিনটা ১২ মিনিটের দিকে সে পূজামণ্ডপের হনুমানের মূর্তির হাতে থাকা গদা নিয়ে নানুয়ার দিঘির পশ্চিম পাড়ের রাস্তার দিকে আসে আবার ঘুরে দারোগা বাড়ি মাজারের সড়কে চলে যায়। দারোগা বাড়ি মসজিদে সে প্রবেশ করে ৩টা ২২ মিনিটে। পরদিন সকালে যখন মানুষ বিক্ষোভ করে তখন সে ঐ বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং অশ্লীল ভাষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে গালিগালাজ করে।
আরও পড়ুন: জোর করে নাবালিকার সাথে বিয়ে দেয়ায় বরের মামলা, আটক দুই
এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে মাজার থেকে কোরআন নেওয়ার আগে মাজারের নামাজের স্থানে দুইজন ব্যাক্তির সাথে বসে তাকে কথা বলতেও দেখা যায়। এসময় সেখানকার একটি দানবাক্সের উপর থেকে কোরআন নিয়ে নামাজের স্থানে ইকবালের হাঁটাচলা ও অবস্থান করার দৃশ্যও ধরা পরে।
ইকবাল হোসেনের মা আমেনা বিবি জানান, শুক্রবার থেকেই পুলিশ তার ছেলের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। এলাকার লোকজনের কাছে তারা খুব হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। গত ১০ বছর ধরে ইকবাল মানসিক ভারসাম্যহীন বলেও জানান ইকবালের মা।
কুমিল্লার সুজানগরের খানকা মাজার শরীফ সংলগ্ন এলাকার নূর আহাম্মদ আলমের ছেলে ইকবাল। পুলিশের তথ্য অনুসারে, ইকবাল পেশায় একজন রংমিস্ত্রি হলেও ভবঘুরে ধরনের। গত ১৩ অক্টোবর রাত দুইটার পরে সে এ ঘটনা ঘটায়।
একাত্তর/টিএ