শেরপুরে আট বছর বয়সী এক মাদরাসাছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মা-বাবার বিচ্ছেদ হলেও শিশুটির বাবার পক্ষ এ মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা দাবি করা হয়েছে। আর বিচ্ছেদের পর অন্যের স্ত্রী ও শিশুটির মায়ের অভিযোগ, হত্যার পর তাকে ফাঁসি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও সুরতহালে শিশুটির শরীরে আঘাতে চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবুও পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠিয়েছে।
শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে শেরপুর জেলা শহরের চকপাঠক বউ বাজার এলাকা থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শিশুটির নাম ওসমান গণি (৮)। সে ওই এলাকার মেহেদী হাসান প্রিন্সের ছেলে ও শহরের নাগপাড়া এলাকার মারকাজুল কোরআন হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্র ছিলো।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মেহেদী হাসান প্রিন্স ও মারিয়া ইয়াসমিনের সন্তান ওসমান গণি। পারিবারিক কলহের কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা চলার পর প্রিন্স রায় পায়।
এরপর গেলো তিন বছর আগে প্রিন্স দ্বিতীয় বিয়ে করে। বিয়ের পর সৎ মা’সহ পরিবারের সবাই ওসমান গণিকে লালন-পালন করে। এদিকে মারিয়া ইয়াসমিনেরও অন্যত্র বিয়ে হয়। প্রিন্সের দ্বিতীয় বিয়ের পরে গণিকে তার দাদু শহরের নাগপাড়ার একটি মাদরাসায় ভর্তি করান। গত সপ্তাহে প্রিন্সের বাবা স্ট্রোক করে মারা গেলে গণিকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার দুপুরে গণি ঘরের দরজা বন্ধ করে খেলছিল। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে দেখে সে ফাঁসিতে ঝুলে আছে। পরে পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
শিশুটির মা মারিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছে, আমি এর বিচার চাই।
নিহতের মামা উজ্জ্বল মিয়া ও রেজাউল করিম জানান, আমাদের ভাগনেকে কৌশলে হত্যা করেছে তার বাবা, সৎ মা ও তাদের বোন জামাই। হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে, আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। তারা জানান, ওসমান গণি সব সময় আদরে থাকতো। আজ দুপুরে ঘরের দরজা বন্ধ করে সে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এখন আমাদের ফাঁসানোর জন্যই এসব বলছে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা দেওয়ায় নামাজে বাধা, সমাজচ্যুতির অভিযোগ
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহম্মেদ বাদল বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সুরতহালে নিহতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাত্তর/এসি