মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে ফেরি রজনীগন্ধ্যা ডুবিতে নিখোঁজ সহকারী মাস্টার হুমায়ুন কবির এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৪৮ ঘণ্টায় তার খোঁজ মেলেনি। পরিবার সংশ্লিষ্টদের কাজের গাফলতি রয়েছে দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নিখোঁজের বাড়ি গিয়ে প্রতিবেদকের দেখা হয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের ছেলে ইয়াসিনের (১০) সাথে। ইয়াসিন জানায়, বাবা বাড়িতে ফিরে তার মার্কশিট দেখবে বলেছিলো। তাছাড়া শুক্রবার দুপুরে তাদের মসজিদে একত্রে নামাজ পড়তেও যাওয়ার কথা ছিলো।
হুমায়ুনের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে। তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তিনি ২০১১ সালে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি শুরু করেন। সাত মাস আগে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পথে যোগদান করেন।
হুমায়ুনের মেয়ে কামুন্নাহার জানান, তার বাবা গত মঙ্গলবার রাতে মাকে শেষ ফোন করেছিলো। বলেছিলেন তাদের সবাইকে শীতের নতুন পোশাক কিনে দেবেন।
কামুন্নাহার বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি আমার বাবা। তার কিছু হলে আমাদের পরিবার কীভাবে চলবে তা বুঝতে পারছি না।
এসময় পরিবারের অন্য সদস্যরা দ্রুত নিখোঁজের সন্ধান চেয়ে আহাজারি করেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. মনসুর আলী জানান, হুমায়ুন ভালো মানুষ ছিলেন। তাকে মসজিদের সভাপতি করেছিলো বাসিন্দারা।
হুমায়ুনের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম শাওন জানান, আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ট্রলার নিয়ে ঘাটে গিয়ে তাকে খুঁজেছি। কয়েকটি ট্রাক উদ্ধার করা হলেও আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, নিখোঁজ হুমায়ুন বিষয়ে সরকারি বিধি মোতাবেক সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেরি রজনীগন্ধার স্টাফদের বরাত দিয়ে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরিটি নদীতে নোঙর করে ছিলো। সকাল আটটার দিকে বালুবাহী একটি বাল্কহেড ফেরিটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এরপরই এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ফেরিডুবির প্রায় চার ঘণ্টা পর বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
বিআইডব্লিউটিসি, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত একটার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিটিতে সাতটি ছোট ও বড় দুটি মালবাহী ট্রাক ছিলো। রাত দেড়টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে আটকা পড়ে ফেরিটি। এ সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচল বন্ধ থাকে। বুধবার সকাল আটটার পরপর ফেরিটি ডুবে যেতে থাকে। এ সময় যানবাহনের চালক, সহকারী এবং ফেরিতে কর্মরত লোকজন দ্রুত নদীতে ঝাঁপ দেন।
ফেরিডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পক্ষ থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।