জামালপুরের মেলান্দহে ক্ষুদ্র ঋণের জালে আটকা পড়ে আছে অসংখ্য দরিদ্র পরিবার। অনেকেরই অভিযোগ কয়েক বছর আগে সুদসহ ঋণের সব টাকা পরিশোধ করেও তারা গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। ব্যাংকের দাবি টাকা শোধ হয়নি। জামালপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় এমনই ঋণ চক্রে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার সূর্যবানু। সংসার জীবনের শুরুতে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন পূরণে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য হয়ে অল্প কিছু ঋণ নেন। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। গেলো ৩৫ বছরেও সেই ঋণের জাল থেকে বেরুতে পারেননি সূর্যবানু। একে একে চার কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন। শেষ বয়সে বাকী এক মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। কিন্তু কিছুদিন পর জানতে পারেন তার ২৪ হাজার টাকার ঋণের সুদ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার টাকা। তার মাথায় এখন ৫২ হাজার টাকা ঋণের বোঝা।
গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা সূর্যবানু বলেন, আমার পাঁচ মেয়ে, আমি এতো টাকা ঋণ দিতে পারবো না। কিস্তি দিতে না পারায় তারা নানা কথা বলেছে।
সূর্যবানুর মতো এমন বহু নারীর মাথায় এমন ঋণের বোঝা। তাদের অভিযোগ ঋণের পুরো টাকা শোধ করার পরও তাদের বলা হয়ে আরও পাওনা আছে। এভাবে এনজিওগুলোর সুদ গোনা যেন কিছুতেই শোধ হয় না।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান সদস্যরা বলছেন, ঋণ নিয়ে তাদের জীবনে সফলতা তো আসেইনি। উল্টো সুদের টাকা শোধ করতে করতে জীবন বিষিয়ে উঠেছে।
মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী পৌরসভা। এখানে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। গত কয়েক বছরে এই ব্রাঞ্চের তিনশরও বেশি সদস্য গ্রামীণ ব্যাংক ছেড়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
মেলান্দহ'র গ্রামীণ ব্যাংক ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার বলেন, তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দেবেন। মাসিক বা কিস্তিতে তারা টাকা দিতে পারবে। কারো সামর্থ্য থাকলে এককালীন পরিশোধ করে আবার ঋণ নিতে পারবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণকে এখন ফাঁদ বলে মনে করছেন মেলান্দহের সদস্যরা। যারা এই ফাঁদে আটকে আছেন তারা কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কিনা সেটি অনিশ্চিত।